Wednesday, September 24, 2025
Homeশিক্ষামূলক গল্পএক কৃষকের গাধা ও কুয়ার একটি শিক্ষণীয় গল্প

এক কৃষকের গাধা ও কুয়ার একটি শিক্ষণীয় গল্প

এক কৃষকের গাধা ও কুয়ার একটি শিক্ষণীয় গল্প

এক গ্রামে এক কৃষক থাকত। তার একটি গাধা ছিল, বয়সে বেশ পুরোনো হলেও কৃষকের নিত্যদিনের কাজে সেটি ছিল ভরসার সঙ্গী। প্রতিদিন ভোরে গাধাটি কৃষকের সঙ্গে মাঠে যেত, ভার বহন করত, কখনো ফসল বয়ে আনত, আবার কখনো কাঠ বা খড় নিয়ে আসত। যদিও বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তবু কৃষকের কাছে সে ছিল পরিবারের মতোই আপন। একদিন বিকেলের দিকে গাধাটি মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পা পিছলে একটি অগভীর কুয়ার মধ্যে পড়ে গেল। কুয়ার গভীরতা এমন ছিল যে গাধা নিজের থেকে উঠতে পারল না, আর গলার স্বর চিরে চিৎকার করতে লাগল “হেঁই! আমাকে বাঁচাও!” তার চিৎকারে কৃষক ছুটে এলেন, পরে আশেপাশের গ্রামবাসীরাও জড়ো হল। সবাই মিলে চেষ্টা করেও গাধাটিকে কোনোভাবেই টেনে তোলা গেল না।

কৃষক দীর্ঘক্ষণ কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তা করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এভাবে গাধাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। গাধাটি আবার বয়সেও অনেক বেশি, আগের মতো কাজে লাগেও না। উপরন্তু এই কুয়ার জন্য বহুবার বাচ্চারা পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। কৃষকের মনে তখন দোটানা, কী করবেন? অবশেষে তিনি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি গ্রামবাসীকে বললেন, “এই কুয়ার ভেতরে গাধাকে বাঁচাতে গেলে বিপদ বাড়বে। কুয়ার ভেতরে গাধা পড়ে থাকাই ভালো নয়। বরং কুয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাধাটিকেও ভরাট করে দিই। গাধারও কষ্ট শেষ হবে, কুয়ার বিপদও শেষ হবে।” কৃষকের এই সিদ্ধান্ত শুনে গ্রামবাসীরা অবাক হলেও তার কথায় সম্মতি জানাল। সবাই কোদাল আর বেলচা নিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করল এবং একের পর এক মাটি কুয়ার ভেতরে ফেলতে লাগল।

গাধা প্রথমে বুঝতে পারল না কী হচ্ছে। মাথায় মাটির দলা পড়তে শুরু করতেই সে আঁতকে উঠল। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল, বুকের ভেতরে ভয় আর দুঃখ জমে উঠল। সে ভেবেছিল, প্রভু তাকে বাঁচাবে, কিন্তু প্রভুই যেন তাকে ধ্বংস করতে চাইছে! ধীরে ধীরে গাধা বোঝে, এই মানুষগুলো তাকে কুয়োর মাটির নিচে কবর দিয়ে ফেলতে চলেছে। ভয়ে সে আরও জোরে চিৎকার করল, কিন্তু উপরে থাকা মানুষগুলো কোনো ভ্রুক্ষেপ করল না, বরং মাটি ফেলতেই থাকল। কিছুক্ষণ কেঁদে-চেঁচিয়ে হাল ছেড়ে দিচ্ছিল, এমন সময় তার মাথায় এক আশ্চর্য বুদ্ধি এলো।

গাধা ভাবল, “যদি আমি প্রতিবার পড়ে আসা মাটিকে ঝেড়ে ফেলতে পারি, আর তার ওপর পা রেখে দাঁড়াই, তবে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে পারব। মাটির নিচে চাপা পড়ার বদলে আমি মাটির ওপর ভর করে বাঁচতে পারব।” এরপর থেকে গাধা নতুন কৌশল শুরু করল। মাটি পড়লেই সে ঝেড়ে ফেলত, তারপর ধীরে ধীরে ওপরের দিকে পা রাখত। প্রথমে ধীর গতিতে হলেও পরে সে অভ্যস্ত হয়ে গেল। গ্রামবাসীরা যখন একনাগাড়ে মাটি ফেলতে ব্যস্ত, তখন গাধা প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল। কৃষকও বিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন, যে গাধাটিকে তিনি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, সে-ই নিজের বুদ্ধি আর ধৈর্যে বাঁচার পথ খুঁজে নিচ্ছে।

ঘণ্টাখানেক ধরে এই সংগ্রামের পর কুয়ার ভেতর প্রায় ভরে গেল। হঠাৎ সবাই অবাক হয়ে দেখল, গাধাটি এক লাফে কুয়ার মুখে উঠে এসেছে! সে মুক্ত হয়েছে। গাধা উঠে এসে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল, যেন ঘোষণা দিচ্ছে “আমি হাল ছাড়িনি, তাই বেঁচে গেছি।” কৃষক আবেগে গাধার ঘাড়ে হাত রাখলেন। তিনি চোখ ভিজিয়ে বললেন, “ওরে, তুই শুধু আমার সঙ্গী নস, তুই আমার শিক্ষক। তুই আমাকে শিখিয়ে দিলি, জীবনে যত বিপদই আসুক না কেন, একে একে সব ঝেড়ে ফেলতে হবে।”

শিক্ষণীয় কথা
জীবনে চলার পথে আমরা অনেক সময় সমস্যার কুয়ার মধ্যে পড়ে যাই। চারপাশের মানুষ সাহায্য না করে উল্টে আমাদের উপরে দোষ, কষ্ট আর চাপের মাটি ছুঁড়ে মারে। তখন যদি আমরা থেমে যাই, তবে সেই সমস্যার পাহাড় আমাদের কবর দিয়ে ফেলবে। কিন্তু যদি গাধার মতো প্রতিটি কষ্টকে ঝেড়ে ফেলি এবং তার ওপরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাই, তবে একদিন আমরাও কুয়ার অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে আলোয় বেরিয়ে আসতে পারব। তাই মনে রাখুন, কখনোই হাল ছাড়বেন না, প্রতিটি সমস্যাই আপনার সোপান হয়ে উঠতে পারে।

GolpoKotha
GolpoKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments