Thursday, July 24, 2025
Homeমজার গল্পরম্য গল্পমজার গল্প – আপনিই তিনি

মজার গল্প – আপনিই তিনি

মজার গল্প – আপনিই তিনি

কেহ কেহ বলে ফাজিল-চালাকেরা নানান রকম মজার মজার গল্পগাছা ও রং তামাশার চুটকি বা রগড় কাহিনী তৈয়ার করিয়া বন্ধু মহলে ফেরি করিয়া বেড়ায়, কখনও বা সেই সব রঙ্গরসের ভিয়েন দেওয়া জিনিস মুখে মুখে চাউর হইয়া ব্যাপক প্রচার পাইয়া যায়। কোনও নাগরিক ফচকিয়া এই রকম একখানা মজাদার গল্প তৈয়ার করিয়া বাজারে ছাড়িয়া দেওয়ায় তাহা আর শুধু নগরে সীমাবদ্ধ নাই, গ্রামগঞ্জেও পরিচিতি পাইয়া উত্তরোত্তর জনিপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছে।

আমি গ্রামে যাইয়া আমার এক পুরানা বন্ধুর সাক্ষাৎ পাই। সে আমাদের সহিত ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়া কৃতকার্য হইতে পারে নাই। সে আজীবন গ্রামেই থাকে। বাড়ির অবস্থা ভাল। প্রচুর ধান হয়, সচ্ছল অবস্থা। তবে লোক দেখাইবার জন্য একটা কিছু করিতে হয়, তাই সে হোমিওপ্যাথি করে। আপাত দৃষ্টিতে ইহাই তাহার পেশা। গ্রামের বাজারে তাহার ডিসপেনসারিও আছে। তবে নেশা হইল খবরের কাগজ পড়া, সন্ধ্যাবেলা ইয়ার-বন্ধুদের সঙ্গে চা-সিঙ্গাড়া সহযোগে রাজা-উজির নিধন করা, বিবিসি শোনা। গ্রামে বাস করিলেও সে সারা বিশ্বের খবর রাখে তাহা জানান দিবার জন্য ঔষধ কিনিবার জন্য নিউমার্কেটে আসিলে বাড়ি ফিরিবার সময় নীলক্ষেত হইতে পাচ দশ টাকায় পুরানা টাইম, নিউজউইক কিনিয়া নিয়া যায় এবং দোকানে সাজাইয়া রাখে। ইহাতে সে বেশ একটা গোপন সুখ ও গর্ববোধ করে।

আমি গ্রামে যাইয়া তাহার দোকানে পা রাখিতেই সে মহাখুশিতে বাগবাগ হইয়া পরোটা লটপটি খাইবার অর্ডার দিল, সেই সঙ্গে ‘ফাস-কেলাস’ লাল চা। আমি শুধু চা খাইতে চাহিলাম। চা আসিল, বন্ধুটি সুকৌশলে হাত দিয়া ঠেলিতে ঠেলিতে টাইম, নিউজউইক আমার প্রত্যক্ষ দৃষ্টির সম্মুখে আনিয়া ফেলিল। আমি মনে মনে হাসিলাম।

সে অল্প বয়স হইতেই নানান কিছিমের রগড় কাহিনী বলিয়া আসর মাত করিতে পারিত। আমি একখানা গ্রাম-বাংলার রঙ্গরসের কাহিনী বলিতে বলায় সে বলিল : “দোস্ত, এখন বিশ্বায়নের যুগ। গ্রামের প্যাচাল আইজকার মত গুলি মারি। আমি একখানা এমন গল্প বলিব যাহাতে বিশ্বায়নের ব্যাপারটা থাকে।”

আমি তাহাকে সেই গল্প বলিতে বলায় সে সোৎসাহে শুরু করে।

“ঘটনাটি বিদেশের। ২০৪০ সাল এর। একবার একটি অনুষ্ঠানে একে একে আমন্ত্রিত লোকেরা বারান্দা দিয়া হলরুমের দিকে যাইতেছে। যাত্রাপথে প্রত্যেককেই পাহারাদারদের কাছে পরিচয় দিয়া/আমন্ত্রণপত্র দেখাইয়া তবেই হলরুমে প্রবেশের ছাড়পত্র পাইতে হচ্ছে। দুইজন লোক পরিচয় দিয়া পার হইয়া গেল। ইহার পরে গদাইলস্করি চালে একজন আসিলেন এবং ড্যামকেয়ার ভাব নিয়া বলিলেন : আমাকে যাইতে দিন।

পাহারাদারঃ আপনার পরিচয়?

আগন্তুকঃ আমি প্রেসিডেন্ট বুশ।

পাহারাদারঃ প্রমাণ?

আগন্তুকঃ গোটা বিশ্ব আমাকে চিনে। আপনারা চিনেন না, বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার বটে!

অশিক্ষিত পাহারাদার তাহার বসকে ডাকিয়া আনে। তিনিও আগন্তুকের পরিচয়ের প্রমাণ চাহেন।

আগন্তুকঃ কিছুক্ষণ আগেই দুইজন পার হইয়া গেল। তাহাদের সহজেই যাইতে দেওয়া হইল। কে তাহারা? তাহারা কি আমার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ? কি নাম তাহাদের?

নিরাপত্তা কর্মকর্তাঃ স্যার। তাঁহারা হইলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এবং চিত্রকর পাবলো পিকাসো।

আগন্তুকঃ ইহারা আবার কে? ইহাদের তো চিনিলাম না!

নিরাপত্তা কর্মকর্তাঃ (আগন্তুককে স্যালুট করিয়া) স্যার, আপনার পরিচয় সম্পর্কে আমরা এখন নিশ্চিত। আপনি ভিতরে যান। এই পাহারাদার, স্যারকে সসম্মানে ভিতরে নিয়া যাও।

চুটকিটি শুনিয়া আমি পুলক বোধ করি এবং বলি : গজালটি তো ভালই ছাড়িয়াছ। ছোটকালের বিটকেলেপনা এখনও যায় নাই দেখিতেছি। সে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল।

GolpoKotha
GolpoKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments