Sunday, June 29, 2025
Homeকিশোর গল্পবাঘের রাঁধুনি – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

বাঘের রাঁধুনি – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

বাঘের রাঁধুনি – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

এক বাঘের বাঘিনী মরে গিয়েছিল। মরবার সময় বাঘিনী বলে গিয়েছিল, ‘আমার দুটো ছানা রইল, তাদের তুমি দেখো।’

বাঘিনী মরে গেলে বাঘ বললে, ‘আমি কি করে বা ছানাদের দেখব, কি করে বা ঘরকন্না করব।’

তা শুনে অন্য বাঘেরা বললে, ‘আবার একটা বিয়ে কর, তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বাঘও ভাবলে, ‘একটা বিয়ে করলে হয়। কিন্ত আর বাঘিনী বিয়ে করব না, তারা রাঁধতে-টাধতে জানে না। এবার বিয়ে করব মানুষের মেয়ে, ‘শুনেছি তারা খুব রাঁধতে পারে।’

এই মনে করে সে মেয়ে খুঁজতে গ্রামে গেল। সেখানে এক গৃহস্থের একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ছিল। বাঘ সেই মেয়েটিকে ধরে এনে তার, তার ছানা দুটোকে বললে, ‘দেখ রে, এই তোদের মা।’

ছানা দুটো বললে, ‘লেজ নেই, দাঁত নেই, রোঁয়া নেই, ডোরা নেই- ও কেন আমাদের মা হবে! ওটাকে মেরে দাও, আমরা খাই!’

বাঘ বললে, ‘খবরদার! অমন কথা বলবি তো তোদের ছিঁড়ে টুকরো-টুকরো করব!’ তাতে ছানা দুটো চুপ করে গেল। কিন্ত সেই মেয়েটিকে তারা একেবারেই দেখতে পারত না। আর কথায়-কথায় খালি বলত, ‘আর একটু বড় হলেই আমাদের গায়ে জোর হবে, তখন তোর ঘাড় ভেঙ্গে তোকে খাব!’

সেই মেয়েটির দুঃখের কথা আর কি বলব! বাঘ যখন বাড়ি থাকে না, তখন সে তার মা-বাপ আর ভাইয়ের জন্য গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে। বাঘ এলে তার ভয়ে চুপ করে থাকে। এমনি তার দিন যায়।

আর তার মা-বাপ তো কেঁদে-কেঁদে অই হয়ে গেল। তার ভাইটিও দিনকতক খুব কাঁদলে, তারপর তা মা-বাপকে বললে, ‘শুধু ঘরে বসে কাঁদলে কি হবে? আমি চললুম, দেখি বোনের সন্ধান করতে পারি কিনা।’ এই বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে, খালি বনে-বনে ঘুরতে লাগলো। ঘুরতে-ঘুরতে শেষে সেই বাঘের বাড়ি এসে তার বোনকে দেখতে পেল।

বোনটি তো তাকে দেখেই কাঁদতে-কাঁদাতে বললে, ‘ও দাদা, তুমি কেন এলে? বাঘ এলেই যে তোমাকে ধরে খাবে!’

ভাই বললে, ‘খায় খাবে!’ আমি তোকে না নিয়ে ফিরছি না। এখন আমাকে লুকিয়ে রাখ, তারপর দেখন এখন।’

তখন তারা দুজনে মিলে রান্নাঘরে গর্ত খুঁড়ল। মেয়েটি সেই গর্তের ভিতরে তার ভাইকে বসিয়ে, শিল চাপা দিয়ে রাখল।

তারপরেই বাঘ এসে, তার ছানা দুটোকে নিয়ে খেতে বসল। ছানা দুটো ভালো করে খাচ্ছে না। খালি বলছে-

‘বাবাগো বাবা, তোর কি শালা? মোর কি মামা?
মা’র কি সোদর ভাই?
শিলের তলে কুমকুম করে-তুলে দে না বাবা খাই!’

বাঘ সেদিন কার উপর চটে এসেছিল, তাই ছানা দুটোর কথা শুনেই, ঠাস-ঠাস করে তাদের দুটো চড় মারল। তারা কি বলছে, তা ভেবে দেখল না! খাওয়া শেষ হলে সে মেয়েটিকে বলল, ‘আজ পিঠে করিস, বিকেলে খাব। দেখিস যেন ভালো হয়।’ এই বলে সে আবার বেরিয়ে গেল।

বাঘ চলে গেলে পর মেয়েটি শিলের তলা থেকে তার ভাইকে বার করল। তারপর দুজনে খাওয়া-দাওয়া সেরে, উনুন ধরিয়ে তার উপর কড়ায় করে তেল চড়াল। তারপর বাঘের ছানা দুটোকে কেটে, উনুনের উপর ঝুলিয়ে রেখে, ভাই-বোন সেখান থেকে ছুটে পালাল।

বাঘের ছানা উনুনের উপর ঝুলছে, আর ঝাঁৎ-ঝাৎ করে রক্তের ফোঁটা তপ্ত তেলে পড়ছে। রে বা! ঐ পিঠে হচ্ছে। যদি পিঠে ভালো হয় তো ভালো, নইলে আমরা তিন বাপ-বেটায় মিলে রাঁধুনী হতভাগীকে ছিঁড়ে খাব!’

তারপর ঘরে ঢুকেই তো দেখল কি রকম পিঠে হচ্ছে! তখন বাঘ ‘হালুম হালুম’ করে ঘরময় খুঁজতে লাগল। কিন্ত গৃহস্থের মেয়েকে আর কোথায় পাবে! সে ততক্ষণে তার ভাইকে নিয়ে, মা-বাপের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আর গ্রামের সকল লোক ছুটে এসে তাদের নিয়ে কি আনন্দই যে করছে কি বলব!

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments