Sunday, June 29, 2025
Homeকিশোর গল্পভুতো আর ঘোঁতো – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ভুতো আর ঘোঁতো – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ভুতো আর ঘোঁতো – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ভুতো ছিল বেঁটে আর ঘোঁতো ছিল ঢ্যাঙা। ভুতো ছিল সেয়ানা, আর ঘোঁতো ছিল বোকা। দুজনে মিলে গেল কুলগাছ থেকে কুল পড়াতে। ঘোঁতো কিনা ঢ্যাং, সে দুহাতে খালি কুলই পাড়ছে। ভুতো কিনা বেঁটে, তাই সে কুল নাগাল পায় না, সে শুধু ঘোঁতোর পাড়া কুল খাচ্ছে।

কুল পাড়া হয়ে গেলে ঘোঁতো বলল, ‘কুল কইরে?’ ভুতো বলল, ‘নেই। খেয়ে ফেলেছি।’ ঘোঁতো বলল, ‘বটে রে? তবে দাঁড়া লাঠি আনছি।’

বলেই অমনি ঘোঁতো গেল গাছ কাটতে। গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে। লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে। সে কেন কুল খেয়ে ফেলল-একটাও রাখল না?

গাছ বলল, ‘এই যে ঘোঁতো। কেমন আছ? কোথা যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে পেলল, একটাও রাখল না?’ গাছ বলল, ‘আমাকে কাটবে? কি দিয়ে কাটবে? কুড়ুল কই?

ঘোঁতো গেল কুড়ুল আনতে। কুড়ুল বলল, ‘এই যে ঘোঁতো? কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘কুড়ুল আনতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভূতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে ফেল, একটাও রাখল না?’ কুড়ুল বলল, ‘আমাকে নেবে? শানাবে কিসে? পাথর কই?’

ঘোঁতো গেল পাথর আনতে। পাথর বলল, ‘এই যে ঘোঁতো! কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘পাথার আনতে; আথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে, লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ পাথর বলল, ‘আমাকে নেবে? ভেজাবে কি দিয়ে? জল কই?’

ঘোঁতো গেল জল আনতে। জল বলল, ‘এই যে ঘোঁতো। কেমন আছ? কোথা যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘জল আনতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি ভুতোকে মারতে, সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ জল বলল, ‘আমাকে নেবে? হরিণ আসবে, আমাতে নামবে, গা ভিজবে, তবে ত হবে।’

ঘোঁতো গেল হরিণের কাছে হরিণ বলল, ‘এই যে ঘোঁতো, কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘হরিণ দিয়ে জল তোলাতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ হরিণ বলল, ‘আমাকে নেবে? কুকুর কই? আমাকে ধরবে কে?’

ঘোঁতো গেল তাদের কুকুর ভোলাকে ডাকতে। ভোলা বলল, ‘এই যে ঘোঁতো! কেমন আছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘ভোলাকে ডাকতে; ভোলাকে দিয়ে হরিণ ধরাতে; হরিণ দিয়ে জল তোলাতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে ; সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ ভোলা বলল, ‘আমাকে নেবে? তবে মাখন আনো, নখে মাখি।’

ঘোঁতো গেল মাখন আনতে। মাখন বলল, ‘এই যে ঘোঁতো! কেমন আছ? কেথায় যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘মাখন আনতে, ভোলাকে দিতে, নখে মেখে হরিণ ধরতে; হরিণ দিয়ে জল তোলাতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ মাখন বলল, ‘আমাকে নেবে? তবে বেড়াল আনো, চেটে তুলুক।’

ঘোঁতো গেল তাদের মেনির কাছে। মেনি বলল, ‘এই যে ঘোঁতো! কেমন আছ! কোথায় যাচ্ছ? ঘোঁতো বলল, ‘মেনিকে খুঁজতে, মাখন চেটে ভোলাকে দিতে, নখে মেখে হরিণ ধরতে, হরিণ দিয়ে জল তোলাতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাকে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিযে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না? মেনি বলল, আমকে নেবে? দুধ দাও তবে, খাই আগে।’

ঘোঁতো গেল গাইয়ের কাছে। গাই বলল, ‘এই যে ঘোতো! কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছে?’ ঘোঁতো বলল, ‘গাইয়ের কাছে দুধ আনতে; মেনির তা খেয়ে মাখন চেটে ভোলাকে দিতে, নখে মেখে হরিণ ধরতে; হরিণ দিয়ে জল তোলাতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে; সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ ‘দুধ নেবে? খড় আনো তবে, খাই আগে!’

ঘোঁতো গেল চাষার কাছে। চাষা বলল, ‘এই যে ঘোঁতো! কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছ! ঘোঁতো বলল, চাষার কাছে খড় আনতে; গাইকে দুধ পেতে, মেনি খেয়ে মাখন চেটে ভোলাকে দিতে, নখে মেখে হরিণ ধরতে; হরিণ দিয়ে জল তোলাতে; জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে। সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ চাষা বলল, ‘খড় নেবে? আটা আনো, পিঠে খাব।’

ঘোঁতে গেল মুদীর কাছে। মুদী বলল, ‘এই যে ঘোঁতো! কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছ?’ ঘোঁতো বলল, ‘মুদীর কাছে আটা আনতে, চাষাকে দিয়ে খড় নিতে; খড় নিয়ে গাইকে দিয়ে দুধ পেতে, মেনি তা খেয়ে মাখন চেটে ভোলাকে দিতে; নখে মেখে হরিণ ধরতে; হরিণ দিয়ে জল তোলাতে, জল দিয়ে পাথর ভেজাতে; পাথর দিয়ে কুড়ুল শানাতে; কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটতে; গাছ দিয়ে লাঠি বানাতে; লাঠি দিয়ে ভুতোকে মারতে। সে কেন কুল খেয়ে ফেলল, একটাও রাখল না?’ মুদী বলল, ‘নদী থেকে এই চালনি ভরে জল আনো, নইলে আটা পাবে না।’

চালনি নিয়ে খুশি হয়ে ঘোঁতো গেল নদী থেকে জল আনতে। জল ত তাতে থাকে না, তুলতে গেলেই পড়ে যায়। যত তোলে ততই পড়ে। বেলা হল, বেলা গেল, সন্ধ্যা এল। ঘোঁতো তবু খালি চালনি ডোবাচ্ছ আর তুলছে, আর খালি ঝরঝর করে পড়ে যাচ্ছে। ঘোঁতো বলল, কি মুশকিল! এখনকি হবে?

সেখানে কতকগুলো হাঁস ছিল, তাঁরা প্যাঁক প্যাঁক করে ডাকছিল। তা শুনে ঘোঁতো বলল, ‘আরো তাই ত, ঠিকই ত বলেছে। চালনিতে পাঁক মাখিয়ে নিতে হবে, তাহলেই ফুটো বন্ধ হয়ে যাবে আর জল ধরবে।’ নদীর ধারে পাঁক ছিল, ঘোঁতো তাই নিয়ে চালনিতে মাখাল। ফুটো বন্ধ হয়ে গেল, আর জল পড়তে পেল না। ঘোঁতো তখন হাসতে হাসতে জল নিয়ে মুদীর কাছে ফিরে এল। মুদী তাতে খুশী হয়ে ঘোঁতোকে ঢের আটা দিল। আটা নিয়ে ঘোঁতো গেল চাষার কাছে। চাষা তাতে খুশি হয়ে ঘোঁতোকে খড় দিল। খড় নিয়ে ঘোঁতো দিল গাইকে; গাই তা খেয়ে খুশি হয়ে ঢের দুধ দিল। দুধ নিয়ে ঘোঁতো দিল মেনিকে; মেনি তা খেয়ে খুশি হয়ে মাখন চেটে ভোলাকে দিল।

ভোলা সে মাখন নখে মেখে হরিণ ধরে আনল। হরিণ গিয়ে জলে নেমে গা ভিজিয়ে এল। ঘোঁতো তার গা থেকে জল নিয়ে পাথরে দিল, সেই পাথরে কুড়ুল শান দিল, সেই কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটল, সেই গাছ দিয়ে লাঠি বানাল, সেই লাঠি নিয়ে দাঁত কড়মড়িয়ে ছুটে গেল কুলগাছতলায় ভুতোকে মারতে। ভুতো কি ততক্ষণ গাছতলায় বসে? সে তার কত আগেই ছুটে পালিয়েছে।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments