Monday, June 30, 2025
Homeকিশোর গল্পবোকা কুমির ও চালাক শিয়ালের গল্প

বোকা কুমির ও চালাক শিয়ালের গল্প

বোকা কুমির ও চালাক শিয়ালের গল্প

কুমির আর শিয়াল মিলে চাষ করতে গেলো। তবে কিসের চাষ করা যায়, তাই ভাবতে লাগলো দুজন। হঠাৎ মাথায় এলো আলুর চাষের কথা। তবে এখানে কুমির এক ফন্দি আটলো। আলু হয় মাটির নীচে। তার গাছ থাকে মাটির উপরে, তা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। এটা বোকা কুমির জানতোই না।

সে ভাবলে বুঝি আলু তার গাছের ফল। তাই সে শিয়ালকে ঠকানোর জন্য বলল, গাছের আগার দিকটা আমার, আর গোড়ার দিক তোমার। শুনে শিয়াল হেসে বললে, আচ্ছা তাই হবে। এরপর যখন আলু হলো, কুমির তখন সব গাছের আগা কেটে তার বাড়িতে নিয়ে এল। এনে দেখে, তাতে একটিও আলু নেই। তখন সে মাঠে গিয়ে দেখল, শিয়াল মাটি খুঁড়ে সব আলু তুলে নিয়ে গেছে। কুমির ভাবলে, তাই তো। এবার বড্ড ঠকে গিয়েছি। আচ্ছা, আসছে বার দেখব।

তারপরের বার হল ধানের চাষ। এবার কুমির মনে মনে ভেবেছে, আর কিছুতেই ঠকা যাবে না। তাই সে আগে থাকেই শিয়ালকে বললো, ভাই, এবারে আমি আগার দিক নেব না, এবার আমাকে গোড়ার দিক দিতে হবে। শুনে শিয়াল হেসে বললে, আচ্ছা তাই হবে!

তারপর যখন ধান হল, শিয়াল ধানসহ গাছের আগা কেটে নিয়ে গেল। কুমির তো এবারে ভারি খুশি। সে মনে মনে ভাবছে আর হাসছে যে, মাটি খুঁড়ে সব ধান তুলে নেবে। কিন্তু মাটি খুঁড়ে দেখে সেখানে কিছুই নেই। লাভের মধ্যে খড়গুলো পেলো। তখন কুমির তো বড্ড চটেছে, আর শিয়ালকে বলল, ‘না ভাই, তোমার সঙ্গে আর আমি চাষ করতে যাব না, তুমি বড্ড ঠকাও!’

কুমির দেখলো, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন ভাবলো, ‘ ও ঢের লেখাপড়া জানে, তাতেই খালি আমাকে ফাঁকি দেয়। আমি মূর্খ লোক, তাই তাকে আঁটতে পারি না।’ অনেকক্ষণ ভেবে কুমির ঠিক করলো যে, নিজের সাত ছেলেকে শিয়ালের কাছে দিয়ে লেখাপড়া শেখাতে হবে। তার পরের দিনই সে ছানা সাতটাকে সঙ্গে করে শিয়ালের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল। শিয়াল তখন তার গর্তের ভিতর বসে কাঁকড়া খাচ্ছিল। কুমির এসে ডাকলো, ‘শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত, বাড়ি আছো ?’

শিয়াল বাইরে এসে বললো, ‘কি ভাই, কি মনে করে?’ কুমির বলল, ‘ভাই, এই আমার ছেলে সাতটাকে তোমার কাছে এনেছি। মূর্খ হলে করে খেতে পারবে না। ভাই, তুমি যদি এদের একটু লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।’ শিয়াল বললো, ‘সে আর বলতে? আমি সাতদিনে সাতজনকে পড়িয়ে পণ্ডিত করে দেব।’ শুনে কুমির তো খুব খুশি হয়ে ছানাগুলোকে রেখে চলে গেল।

তখন শিয়াল তাদের একটাকে আড়ালে নিয়ে বলল ‘পড় তো বাপু-কানা খানা গানা ঘানা, কেমন লাগে কুমির ছানা?’ এই কথা বলে, সেটার ঘাড় ভেঙ্গে, খেয়ে ফেললো। পরদিন যখন কুমির তার ছানা দেখতে এল, তখন শিয়াল তাদের একেকটি করে গর্তের বাইরে এনে দেখাতে লাগল। ছয়টিকে ছয়বার দেখালো, শেষেরটা দেখালো দু’বার। বোকা কুমির তা বুঝতে না পেরে ভাবলো, সাতটাই দেখানো হয়েছে। তখন সে চলে গেল, আর অমনি শিয়াল ছানাগুলোর একটাকে আড়ালে নিয়ে বললো পড় তো বাপু- কানা খানা গানা ঘানা কেমন লাগে কুমির ছানা ?

এই কথা বলে, সেটার ঘাড় ভেঙ্গে, খেয়ে ফেলল। পরদিন কুমির তো ছানা দেখতে এল। শিয়াল একেকটি করে গর্তের বাইরে এনে পাঁচবার পাঁচবার দেখাল, শেষেরটিকে দেখাল তিনবার। তাতেই কুমির খুশি হয়ে চলে গেল। তখন শিয়াল ঠিক আগের মতো করে আর একটা ছানাকে খেল। এমনি করে সে রোজ একটি ছানা খায়, আর কুমির এলে তাকে ফাঁকি দিয়ে ভোলায়। শেষে যখন একটি ছানা রইল, তখন সেই একটিকেই সাতবার দেখিয়ে সে কুমিরকে বোঝাল। তারপর কুমির চলে গেলে সেটিকেও খেয়ে ফেলল। তারপর আর একটিও রইল না।

তখন শিয়ালনী বললো, ‘এখন উপায়? কুমির এলে দেখাবে কি? ছানা দেখতে না পেলে তো অমনি আমাদের ধরে খাবে!’ শিয়াল বললো, ‘আমাদের পেলে তো ধরে খাবে। নদীর ওপারে বনটা খুব বড়, চল আমরা সেইখানে যাই, তাহলে কুমির আর আমাদের খুঁজে বের করতে পারবে না।’ এই বলে শিয়াল শিয়ালিনীকে নিয়ে তাদের পুরোনো গর্ত ছেড়ে চলে গেল। এর খানিক বাদেই কুমির এসেছে। সে এসে ‘শিয়াল পণ্ডিত, ‘শিয়াল পণ্ডিত, বলে কত ডাকল, কেউ তার কথার উত্তর দিল না! তখন সে গর্তের ভেতর-বার খুঁজে দেখল-শিয়ালও নেই, শিয়ালিনীও নেই! খালি তার ছানাদের হাড়গুলো পড়ে আছে। তখন তার খুব রাগ হলো, আর সে চারদিকে ছুটোছুটি করে শিয়ালকে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে-খুঁজতে নদীর ধারে গিয়ে দেখল, ঐ! শিয়াল আর শিয়ালিনী সাঁতরে নদী পার হচ্ছে।

অমনি ‘দাঁড়া হতভাগা!’ বলে সে জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। জলের নিচে ছুটতে কুমিরের মত কেউ পারে না, দেখতে-দেখতে সে গিয়ে শিয়ালের পিছনের একটা পা কামড়ে ধরল! শিয়াল সবে তার সামনের দু-পা ডাঙ্গায় তুলেছিল, শিয়ালিনী তার আগেই উঠে গিয়েছিল। কুমির এসে শিয়ালের পা ধরতেই সে শিয়ালিনীকে ডেকে বললো, ‘শিয়ালিনী, শিয়ালিনী, আমার লাঠিগাছা ধরে কে টানাটানি করছে! লাঠিটা বা নিয়েই যায়!’ একথা শুনে কুমির ভাবলো, ‘তাই তো, পা ধরতে গিয়ে লাঠি ধরে ফেলেছি! শিগগির লাঠি ছেড়ে পা ধরি।’

এই ভেবে যেই সে শিয়ালের পা ছেড়ে দিয়েছে, অমনি শিয়াল একলাফে ডাঙ্গায় উঠে গিয়েছে। উঠেই বোঁ করে দে ছুট। তারপর বনের ভেতরে ঢুকে পড়লো। এখন আর কার সাধ্য তাকে ধরে। তারপর থেকে কুমির কেবলই শিয়ালকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু শিয়াল বড্ড চালাক, তাই তাকে ধরতে পারে না।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments