বুদ্ধিমান কাকের শিক্ষামূলক গল্প
বৈশাখ মাস। দুপুরের কড়া রোদে চারপাশ যেন ঝলসে যাচ্ছে। গাছে পাতা নেই বললেই চলে, মাটি ফেটে চৌচির। বাতাসও যেন গরম লোহার মতো ঝাঁঝালো হয়ে উঠেছে। সব প্রাণী ঘরে বা গর্তে লুকিয়ে আছে রোদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
এই প্রচণ্ড গরমের মাঝে আকাশের উপর উড়তে থাকা একটি কাক বেজায় তৃষ্ণার্ত হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার গলা শুকিয়ে কাঠ। চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে পানির খোঁজে। সে উড়ে উড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে, কিন্তু কোথাও এক ফোঁটা পানিও নেই!
পুকুর শুকিয়ে গেছে, ডোবা ভরাট হয়ে গেছে, ঘরের মাটির কলসীর মুখ বন্ধ! কাকটি একেবারে ক্লান্ত আর হতাশ হয়ে পড়েছে। শেষমেশ সে গিয়ে বসল এক গাছের উঁচু ডালে। বসে বসে চারপাশে তাকাতে লাগল—এই আশায় যদি কোথাও একটু পানি চোখে পড়ে।
তখনই, কাকের চোখে পড়ল এক পুরনো মাটির কলসী, যা পড়ে আছে একটি বাড়ির আঙিনায়। কাকটি মনে মনে ভাবল, “হয়তো এই কলসীর ভেতরে একটু পানি আছে! আমাকে দেখতে যেতেই হবে।”
সে ঝাঁপিয়ে গাছ থেকে নেমে উড়ে গিয়ে বসে পড়ল কলসীর পাশে। মুখ বাড়িয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখে, সত্যিই! একটু পানি আছে… তবে সেটা খুব নিচে! কাকের মুখ সেখানে পৌঁছায় না।
কাকটি কিছুক্ষণ উদাস হয়ে বসে রইল। তারপর সে ভাবল, “এই কলসী যদি কাত করতে পারতাম, তাহলে পানি গড়িয়ে পড়ে যেত। তখন আমি সহজেই খেতে পারতাম!”
সে কলসীটাকে ঠেলে কাত করার অনেক চেষ্টা করল। ঠোঁট দিয়ে টানল, ডানা দিয়ে ধাক্কা দিল, কিন্তু কিছুতেই কলসী নাড়ানো গেল না। কলসী শক্ত করে মাটিতে আটকে আছে।
কাকটি হাল ছেড়ে দেয়নি। এবার সে চারপাশে তাকিয়ে ভাবল, “এখন কী করা যায়?”
হঠাৎই তার মাথায় একটা চমৎকার বুদ্ধি খেলে গেল।
সে চারপাশে থাকা ছোট ছোট নুড়ি পাথর দেখতে পেল। এবার সে এক একটা পাথর ঠোঁটে তুলে এনে কলসীর ভেতরে ফেলতে লাগল।
একটা, দুইটা, তিনটা… এভাবে অনেকগুলো পাথর ফেলার পর দেখা গেল, সত্যি! পানি আস্তে আস্তে ওপরে উঠতে শুরু করেছে।
কাকটি আরও উৎসাহ নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর, কলসীর ভেতরে থাকা পানি এত ওপরে উঠে এলো যে কাকের মুখে পৌঁছে গেল।
কাকটি তখন চটপট ঠোঁট ডুবিয়ে ঠাণ্ডা পানি খেতে লাগল। হ্যাঁ, অনেক পরিশ্রম করে সে আজ তৃষ্ণা মেটাতে পেরেছে।
পানি খেয়ে কাকের চোখে মুখে প্রশান্তির ছোঁয়া। সে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার উড়ে চলে গেল, আকাশে, বাতাসে, ডানায় ভর করে।
নীতিকথা – বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়