চালাক শিয়াল ও মরা হাতির গল্প
অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক গভীর বনের ভেতরে বাস করত এক বেজায় চালাক শিয়াল। ছোটখাটো দেখতে হলেও তার মাথায় ছিল হাজার বুদ্ধি। সে যখনই কোনো বিপদে পড়ত, তখন নিজের বুদ্ধি দিয়ে ঠিক পথ বের করে নিত।
একদিন শিয়ালের খুব খিদে পেয়েছিল। পেট চোঁ চোঁ করছে, চোখে মুখে ক্লান্তি। বনে ছোটাছুটি করে খাওয়ার খোঁজ করছিল। কিন্তু সেদিন যেন সব প্রাণী লুকিয়ে ছিল। কোথাও কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না।
হঠাৎ করে একটা বড় শব্দে থেমে গেল শিয়াল। সামনে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে দেখল, একটা বিশাল হাতি মরে পড়ে আছে। তার চোখ চকচক করে উঠল। সে ভাবল, “বাহ্। আমার আজকের খাবারের চিন্তা শেষ। এত বড় হাতি, এক মাস চলবে।”
শিয়াল তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেল হাতির কাছে। গিয়ে দেখল, হাতির গা মোটা চামড়ায় ঢাকা, তার দাঁত দিয়ে কিছুতেই কেটে মাংস বের করা যাচ্ছে না। সে অনেক চেষ্টা করল, কামড়াতে লাগল, আঁচড়াতে লাগল, কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না।
শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে হতাশ হয়ে হাতির পাশেই বসে পড়ল। ভাবল, “ইশ। এত খাবার সামনে পড়ে আছে, আর আমি একটুকুও খেতে পারছি না।”
ঠিক তখনই সে শুনতে পেল এক গর্জন, “গ্ররররর।”
শিয়াল চারপাশে তাকিয়ে দেখে, বনের রাজা সিংহ তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে শিয়ালের গলা শুকিয়ে গেল। কিন্তু সে তো চালাক! সে ভয় পেয়ে পালাল না। বরং মিষ্টি গলায় বলল,
“আসুন মহারাজ, আসুন। আমি আপনার জন্য এই বিশাল হাতি শিকার করে পাহারা দিচ্ছি। আপনি আসুন, আরাম করে খান।”
সিংহ রেগে গর্জে উঠল, “আমি কারো দেওয়া খাবার খাই না। আমি নিজেই শিকার করি। অন্যের দয়ায় বাঁচি না।”
এই বলে সিংহ সেখান থেকে চলে গেল।
শিয়াল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আবার নিজের মনের মধ্যে চিন্তা করতে লাগল, “এই হাতির চামড়া কেউ যদি কেটে দেয়, তাহলেই তো আমি খেতে পারব।”
তখনই সেখানে এসে হাজির হলো এক চিতা।
শিয়াল খুশি হয়ে হাসিমুখে বলল, “আরে এসো বন্ধু চিতা। এই যে বিশাল হাতির মাংস, একবার টেস্ট করে দেখো। চমৎকার। এটা কিন্তু সিংহের শিকার। আমি পাহারা দিচ্ছি।”
চিতা শুনেই ভয় পেয়ে বলল, “কি বলো। সিংহের শিকার? আমি তা খেতে পারি না। রাজা রাগ করলে তো জীবনই শেষ।”
শিয়াল বলল, “আরে চিন্তা করো না ভাই। তুমি খাও। যদি সিংহ আসে, আমি সাথে সাথে তোমায় জানিয়ে দেব। তখন তুমি পালিয়ে যেও।”
চিতা একটু ভাবল। তারপর বলল, “তাই তো। বুদ্ধির কথা বলেছ। বেশ, তাহলে আমি খেতে শুরু করি।”
চিতা খুব শক্তিশালী আর তার দাঁত ছিল তীক্ষ্ণ। সে শুরু করল খাওয়া। কয়েক কামড়েই হাতির মোটা চামড়া কেটে ফেলল। চামড়ার নিচে ছিল নরম মাংস। সেই মাংস বেরিয়ে এল।
শিয়াল সব কিছু দেখছিল। সে তখন ভাবল, “এই তো সময়।”
যেই চিতা কয়েক টুকরো মাংস খেতে শুরু করেছে, অমনি শিয়াল জোরে চেঁচিয়ে উঠল, “ও চিতা ভাই, সাবধান! সিংহরাজ আসছেন। পালাও।”
চিতা ভয় পেয়ে এক লাফে দৌড়ে পালাল! সে আর পেছন ফিরে তাকাল না।
শিয়াল তখন নিজের মনে হাসতে লাগল। ভাবল, “দেখেছো, না নিজের দাঁত খরচ করলাম, না রক্ত ঝরালাম, তবু আমার খাবার তৈরি।”
এবার সে আর দেরি করল না। সুন্দর করে হাতির কাছ থেকে মাংস নিয়ে খেতে লাগল। একেবারে পেট পুরে খেল।
এইভাবেই চালাক শিয়াল নিজের বুদ্ধি দিয়ে মরা হাতির মাংস খাওয়ার সুযোগ পেল।
শিক্ষা: বিপদের সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে চিন্তা করলে অবশ্যই সমাধান পাওয়া সম্ভব।