ছোট গল্প – চকলেট
বিকালের একটু আগেই চায়ের দোকান খুললেন আব্দুল মাজেদ চাচা। হাইস্কুলের গেটের বিপরীত পাশেই তার দোকান। স্কুল ছুটি হতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। মফস্বল এলাকা বলে দোকানে তেমন একটা ভীড়ও নেই।
এমন সময় একটা ছেলে এলো দোকানে। বয়স বড়জোড় বিশ কি একুশ। নীল রঙের পাঞ্জাবী গায়ে। কোমরে ঝোলানো একটা হালকা ব্যাগ। চোখে একটা কম পাওয়ারের চশমা। চাহনিতে কেমন একটা বিষন্নতা রয়েছে। কিছুটা না পাওয়ার বেদনা। এরপরও ঠোঁটের কোনায় হাসি লেগে রয়েছে।
ছেলেটিকে তিনি চিনতে পারলেন না। আপাদমস্তক তাকে একবার জরিপ করে নিলেন। এলাকায় সম্ভবত নতুন এসেছে।
ছেলেঃ চাচা, ভালো আছেন?
প্রশ্ন করার ভঙ্গিটা দেখে মনে হল যেন তার সাথে কতদিনের চেনা জানা।
আব্দুল মাজেদ ছোট্ট করে উত্তর দেয়ঃ জি, ভালো।
ছেলেঃ স্কুল ছুটি হবে কখন?
আঃ মাজেদঃ ৫.৩০ এ।
ছেলেটি হাতের ঘড়ি দেখে। এখনো ৫ মিনিট বাকি।
ছেলেঃ আচ্ছা, আপনার দোকানে চকলেট আছে? ১০ টা চক-লেট দেনতো!
আব্দুল মাজেদ বৈয়াম খুলে ১০ টা চকলেট তার হাতে দিয়ে চা বানানোর কাজে লেগে যান। ছেলেটি তার মানিব্যাগ থেকে তাকে টাকা দিয়ে দেয়।
ছেলেটিঃ চাচা!
আব্দুল মাজেদ তার দিকে ফিরে তাকায়। দেখে ছেলেটি তার দিকে একটি হাত বাড়িয়ে রেখেছে। তাতে একটা চক-লেট।
ছেলেঃ এইটা আপনার জন্যে। একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?
আঃ মাজেদঃ কি?
ছেলেঃ আচ্ছা, বলেন তো, সর্বশেষ আপনাকে কে চকলেট দিয়েছিল, মনে পড়ে?
তার প্রশ্নে আঃ মাজেদ নস্টালজিক হয়ে যান। ফিরে যান তার অর্ধশতাব্দী পূর্বের জীবনে। মনে পড়ে যায় মৃত বাবার কথা। ছোট বেলায় বাবা মেলা থেকে তাকে একবার এক প্যাকেট লজেন্স কিনে দিয়েছিল। ছোট্ট মনে সেই এক প্যাকেট লজেন্স সেকি আনন্দ এনে দিয়ে ছিল, সেই স্মৃতি মনে করে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান।
ছেলেঃ কি হল চাচা, নিবেন না?
নতুন প্রশ্নে বাস্তবতায় ফিরে আসেন আঃ মাজেদ। হকচকিত হয়ে হাতের চকলেটটি নিয়ে পকেটস্থ করেন। সামান্য একটা চক-লেট তার মনে কি পরিমান আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেটা ভেবে চমৎকৃত হন।
ছেলেঃ ঠিক আছে চাচা, ছাত্ররা বের হচ্ছে। আরেকদিন কথা হবে। ইনশা আল্লাহ।
বলে স্কুলের গেটের দিকে এগিয়ে যায় ছেলেটি। আব্দুল মাজেদ চাচা ভাবেন এক কাজ করিঃ আজকে বুড়িকেও এভাবে চমকে দিব। রাতে বাসায় গিয়ে স্ত্রীর হাতে সেই চকলেটটি দিয়ে সর্বশেষ তাকে কে চকলেট দিয়েছিল তা জানতে চাইলেন!
বৃদ্ধা স্ত্রীর কাছে তার এই ব্যবহার একটু আশ্চর্যজনক মনে হল। চকলেটটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বললেনঃ বুইড়া বয়সে ব্যাটারে ভীমরতিতে ধরছে!