একটি ইঁদুর ও চাষীর শিক্ষামূলক গল্প
একটি চাষীর ঘরে বাস করত একটি ইঁদুর। দিনের বেশিরভাগ সময় সে লুকিয়ে থাকত গর্তে। একদিন ইঁদুরটি দেখতে পেল, চাষী ও তার স্ত্রী বাজার থেকে ফিরেছেন একটি থলে নিয়ে। ইঁদুরের মনে হলো থলেতে নিশ্চয়ই খাবার আছে। সে খুশি হয়ে এগোতে লাগল।
কিন্তু কাছে গিয়ে দেখে, থলেতে খাবার নয়, বরং একটি ইঁদুর ধরা ফাঁদ। মুহূর্তেই ইঁদুরটি বুঝে গেল, এটা তার জন্য এক ভয়ানক বিপদ। ভয়ে পিছু হটে গেল সে এবং ভাবল, এই খবর অন্যদের জানানো দরকার।
প্রথমে গেল পেছনের উঠানে থাকা পায়রার কাছে। বলল, “চাষী একটি ইঁদুর ধরা ফাঁদ এনেছে! আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে!”
পায়রা হেসে বলল, “তাতে আমার কী? আমি তো পাখি, ফাঁদে পড়ার প্রশ্নই আসে না!”
ইঁদুর ছুটে গেল মুরগির কাছে। মুরগিও অবজ্ঞা করে বলল, এটা তোমার সমস্যা, আমার নয়।
এরপর ইঁদুর ছাগলের কাছে গেল। ছাগল গল্প শুনে হেসে গড়িয়ে পড়ে এবং বলে, আমার তো কোনো ভয় নেই ভাই, তুমি ভাবো তোমার কথা।
ইঁদুর বুঝল, কারো মধ্যেই ভয় নেই। সবাই ভাবছে, বিপদ কেবল ইঁদুরের, অন্যদের কিছু হবে না।
বিপদের শুরু
কিন্তু রাতের বেলায় ঘটল একটি ঘটনা। সেই ফাঁদে আটকে পড়ল একটি বিষাক্ত সাপ। শব্দ পেয়ে চাষীর স্ত্রী ছুটে এলো এবং অন্ধকারে সাপের লেজকে ইঁদুর ভেবে ধরল। মুহূর্তেই সাপটি তাকে কামড়ে দিল। বিষক্রিয়ায় তার অবস্থা খারাপ হতে লাগল।
চাষী দ্রুত ওঝা ডাকল। ওঝা এসে পরামর্শ দিলেন, “পায়রার রক্তে তৈরি জুস খাওয়াতে হবে।” ফলে পায়রাটিকে মেরে জুস তৈরি করা হলো।
তবুও অবস্থার উন্নতি হয়নি। আত্মীয়-স্বজনেরা দেখতে এলো, বাড়িতে ভিড় জমল। অতিথি আপ্যায়নের জন্য মুরগিকে যবাই করতে হলো।
দু’দিন পর স্ত্রী মারা গেলে দোয়ার আয়োজন হয়। এবার ছাগলকেও যবাই করা হয় অতিথিদের খাওয়ানোর জন্য।
ইঁদুর? সে অনেক আগেই পালিয়ে গিয়েছে।
গল্পের শিক্ষা
এই ছোট গল্পটি আমাদের শেখায়, কোনো বিপদকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। যেটা আজ একজনের সমস্যা, কাল সেটা হতে পারে সবার।
ইঁদুরটি সবার ভালো চেয়েছিল, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। পরিণামে একের পর এক প্রাণ হারাতে হলো – পায়রা, মুরগি, ছাগল, এমনকি চাষীর স্ত্রীও। অথচ সবাই শুরুতে ভাবছিল, আমার কিছু হবে না।
শেষ কথা
এই গল্পটি শুধু ইঁদুরের বা চাষীর নয়, এটি আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। আজ যে বিপদে পড়েছে, কাল সে তুমি বা আমি হতে পারি। তাই কারো কষ্ট বা ভয়কে উপহাস না করে, পাশে দাঁড়ানোই মানবতা।