Tuesday, June 17, 2025
Homeগোয়েন্দা গল্পরহস্য গল্পমাছ (মিসির আলি) – হুমায়ূন আহমেদ

মাছ (মিসির আলি) – হুমায়ূন আহমেদ

মাছ (মিসির আলি) – হুমায়ূন আহমেদ

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সাইজের মাছের নাম জানেন?

মলা মাছ?

মলা মাছ তো অনেক বড় মাছ। পৃথিবীর সবচে ছোট সাইজের মাছ এক ইঞ্চির তিন ভাগের এক ভাগ।

বলেন কি?

মিসির আলি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন, এই মাছের নাম Paedocypris fish. বিজ্ঞানীরা এই মাছের সন্ধান পান সুমাত্রার জঙ্গলের জলাভূমিতে। মাছটা কাচের মতো স্বচ্ছ।

আমি বললাম, হঠাৎ মাছ প্ৰসঙ্গ কেন?

মাছ বিষয়ে এক সময় খুব পড়াশোনা করেছি। অদ্ভুত মাছ কি আছে জানার চেষ্টা করেছি। সমুদ্রে এক ধরনের মাছ আছে যাদের গায়ে চৌম্বক শক্তি।

আমি বললাম চুম্বক, শক্তির মাছের কথা জানি না, তবে গায়ে ইলেকট্রিসিটি আছে এমন মাছের কথা পড়েছি- ইল মাছ।

নাম সামছু। উনার গল্প শুনবেন?

গল্প শোনার জন্যেই তো এসেছি।

মিসির আলি কোলে বালিশ টেনে নিয়ে আয়োজন করে গল্প শুরু করলেন।

লেখকরা বিচিত্র চরিত্রের মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন। চরিত্র নির্মাণে তাদের সাহায্য হয়। আমি লেখক না তারপরেও বিচিত্র সব চরিত্রের মুখোমুখি হতে ভালো লাগে। তারা যখন কথা বলে তখন তাদের ভেতরটা দেখতে চেষ্টা করি। কথা বলতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে ফেলেন। সন্দেহ বাভিক গ্রস্ত মানুষ কথা বলবেন চিবিয়ে। দুর্বল চিত্তের মানুষ কথা বলবেন নিচু গলায়। ক্রিমিন্যালরা কথা বলার সময় চোখের দিকে খুব কম তাকাবে।

যাই হোক অতি বিচিত্র এক চরিত্রের কথা বলি। নাম আগেই বলেছি সামছু, মোহাম্মদ সামছু। বয়স পঞ্চাশের মতো। চুল-দাড়ি পাকে নি। কিন্তু ভুরু পেকে গেছে। শক্ত-সমর্থ্য শরীর। অনবরত কথা বলা টাইপ। আমি এই ধরনের মানুষের নাম দিয়েছি Perpitual talking machine. ভদ্রলোক গোল জারে দুটা গোল্ডফিশ জাতীয় মাছ নিয়ে এসেছেন। ছুটির দিন। সকাল ন’টায় এসেছেন। আমি কয়েক মিনিট কথা বলেই বুঝেছি। দুপুরের আগে তিনি বিদায় হবেন না।

আপনার নাম মিসির আলি? আপনার শরীরের অবস্থা তো ভালো না। নিশ্চয়ই হজমের সমস্যা। দৈনিক আধঘণ্টা ফ্রি হ্যান্ড একসারসাইজ করবেন। খালি পেটে তিন গ্লাস পানি খাবেন। ফ্রিজের ঠাণ্ড পানি না। ফ্রিজের পানি আর ইদুর-মারা বিষ একই। ইদুরকে সাত দিন ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি খাওয়াবেন ইদুর মারা যাবে। যদি মারা না যায় আমি কান কেটে আপনার বাসার ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিব। নরমাল পানি খাবেন তিন গ্লাস। থ্রি গ্লাসেস। ভাতের সঙ্গে নিয়মিত কালিজিরা ভর্তা খাবেন। আমাদের নবীজি বলেছেন– কালিজিরা হলো মৃত্যু রোগ ছাড়া সকল রোগের মহৌষধ। রাতে ঘুমানোর আগে ইশবগুলের ভুসি। হার্টের কি কোনো সমস্যা আছে?

না।

না বললে তো হবে না, আপনার যা বয়স হার্টের সমস্যা থাকবেই। ঘরে ঢুকেই বুঝেছি ধূমপান করেন। এশট্রেতে সাতটা সিগারেট। ভয়াবহ। সব আর্টারি ব্লক হয়ে গেছে। তবে চিন্তার কিছু নাই। অৰ্জ্জুন গাছের ছাল ব্রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। সকালে খালি পেটে পানিটা খাবেন। ঘরে দারচিনি নিশ্চয়ই আছে। দারচিনি পাউডার করে রাখবেন। এক চামচ দারচিনির পাউডার মধু দিয়ে মাখিয়ে পেষ্টের মতো বানাবেন। সেই পেষ্ট হাতের তালুতে নিয়ে চেটে চেটে খাবেন। এতে শরীরে ঘাম কিছুটা পেটে যাবে। শরীরের ঘাম শরীরের জন্যে উপকারী।

আমি হঠাৎ ফাঁক পেয়ে বললাম, আমার কাছে কি জন্যে এসেছেন জানতে পারি?

নিশ্চয়ই জানতে পারেন। কাজে এসেছি। অকাজে আসি নাই। অকাজে সময় নষ্ট করার মানুষ আমি না। আলস্য করে এক মিনিট সময় আমি নষ্ট করি না। কারণ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আমি আপনার নাম শুনে এসেছি। শুনেছি। আপনার অনেক বুদ্ধি। সাইকোলজির লোক। আপনার উপর না-কি অনেক বইপত্র লেখা হয়েছে। কিছু মনে করবেন না, সেই সব বই পড়া হয় নাই। বই পড়া, খবরের কাগজ পড়া এইসব বদঅভ্যাস আমার নাই। যৌবনে শরৎ বাবুর একটা বই পড়েছিলাম, নাম দেবদাস। তিনটা ভুল বের করেছিলাম। ভুলগুলি কি শুনতে চান?

জি না শুনতে চাচ্ছি না। আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা বলুন।

ভদ্রলোক বিরক্ত গলায় বললেন, আপনি এত তাড়াহুড়া করছেন কেন? মানব সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাড়াহুড়ার কারণে। এই জন্যে আল্লাহপাক পবিত্র কোরান শরিফে বলেছেন, হে মানব সম্প্রদায় তোমাদের বড়ই তাড়াহুড়া। যেহেতু তাড়াহুড়া করছেন- মূল কথাটা বলে ফেলি। আমি জারসহ মাছ দুটা আপনাকে দিতে এসেছি। আপনি যদি কিনে নিতে চান সেটা ভালো। আমি যে দামে কিনেছি তার হাফ দামে দিয়ে দিব। প্রতিটি জিনিসের দাম ডিপ্রিসিয়েশন হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে। শুধু জমির দাম বাড়ে। উত্তরায় আমার তিনি কাঠা জমি ছিল। পাঁচ বছর আগে বিক্রি করে এখন মাথার চুল ছিঁড়ছি। এই ভুল মানুষ করে? এখন উত্তরায় বার লাখ করে কাঠা। What a shame.

আমি বললাম, মাছের জন্য আপনাকে কত দিতে হবে?

সামছু গম্ভীর গলায় বললেন, আমি জারটা কিনেছি একশ টাকায় আর মাছের জোড়া কিনেছি। একশ’ টাকায়। হাফ প্রাইসে আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি, একশ’ টাকা দিলেই হবে। মাছের এক কোটা খাবার ফ্রি পাচ্ছেন। প্রতিদিন চার দানা করে দিলেই হবে। গাদাখানিক খাবার দেবেন না। খাবার যত বেশি দেবেন। মাছ তত হাগবে। জারের পানি ঘন ঘন বদলাতে হবে।

আমি তাড়াতাড়ি মানিব্যাগ খুলে একশ’ টাকা বের করলাম। এই লোক যদি টাকা নিয়ে বিদায় হয় তাহলে জানে বাঁচি।

ভদ্রলোক টাকা পকেটে রাখতে রাখতে বললেন, আমি মানিব্যাগ ব্যবহার করি না। টাকা-পয়সা সবসময় পকেটে রাখি। কারণ মানিব্যাগ চুরি করা পকেটমারদের জানা সহজ। টাকা চুরি করা সহজ না। ভালো কথা, আপনি যদি মাছ না। কিনতে চান তারপরেও এইটা আপনাকে আমি দিয়ে যাব, মাগনাই দিব। আমার স্ত্রী তাই বলে দিয়েছে। সে আবার আপনাকে নিয়ে লেখা বই পড়ে। তার বই পড়ার নেশা আছে। বইমেলায় গিয়ে গত বছর দুইশ’ চল্লিশ টাকার বই কিনেছে। আমি দিয়েছি, ধমক ৷ টাকা তো গাছে ফলে না। কষ্ট করে উপার্জন করতে হয়। ঠিক না?

জি ঠিক।

আমার স্ত্রী মেয়ে খারাপ না আবার ভালোও না। সমান সমান। আমাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে এইটা ভালো আবার আমাকে বোকা ভাবে এইটা খারাপ। দুয়ে মিলে প্লাস এবং মাইনাসে জিরো। আমার স্ত্রী হলো জিরো। এখন কি আপনি শুনতে চান মাছ কেন দিতে চাই? আপনার ভাবভঙ্গিতে তো আবার বিরাট তাড়াহুড়া। মন দিয়ে আমার কথাই তো শুনছেন না। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন।

আমি বললাম, এই মুহূর্ত থেকে এদিক-ওদিক তাকাব না। আপনার কথা শুনব। বলে শেষ করুন।

মাছ দিতে চাই কারণ এই মাছ দুটা ভালো না, খারাপ। এদের মধ্যে দোষ আছে। বিরাট দোষ। আমি তো এত কিছু জানি না। সরল মনে কাঁটাবন থেকে কিনে এনেছি। জোড়া দেড়শ’ টাকা চেয়েছিল, মুলামুলি করে একশ’তে কিনেছি। আমার মেয়ের জন্যে কিনেছি। আমার অধিক বয়সের একমাত্ৰ সন্তান বলেই তার প্ৰতি মায়া বেশি। তার বয়স তিন বছর। আমি নাম রেখেছি মালিহা। ভালো নাম জাহানারা। মাছ দিয়ে সে খেলবে। পশু-পাখির প্রতি মমতা হবে। পশু-পাখির প্রতি মমতার প্রয়োজন আছে। কথায় আছে না। জীবে দয়া করে যেই জন। সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

মাছ কিনে এনে আমি জাহানারাকে বললাম, মা জাহানারা বেগম। কি বলি মন দিয়ে শোনো- এই দুটা মাছ তোমার। আজ থেকে তুমি এদের মা। ইংরেজিতে Mother, তুমি রোজ এদের খাবার দিবে। সকালে চার দানা। বিকালে চার দানা। বেশিও না কমও না। কম দিলে তারা ক্ষুধায় কষ্ট পাবে। বেশি দিলে অতি ভোজনে গায়ে চর্বি হবে। অতিরিক্ত চর্বি মানুষের জন্যে যেমন খারাপ মাছের জন্যেও খারাপ। বেশি খাওয়ালে এরা বেশি হাগবে। এইটা বললাম না। শিশুদের নোংরা কথা না বলা উত্তম।

কিছুদিন পরের কথা। জাহানারা আমাকে বলল, ভালো কথা, আমার মেয়ের ডাকনাম মালিহা কিন্তু আমি তাকে সবসময় ভালো নামে ডাকি। এতে গান্তীৰ্য বজায় থাকে। জাহানারা বেগম আমাকে বলল, বাবা! মাছ আমার সঙ্গে কথা বলে। আমাকে বলে জাহানারা কি করে?

আমি মেয়ের কথার কোনো গুরুত্ব দিলাম না। শিশুরা বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলে এতে তাদের কল্পনা শক্তির বৃদ্ধি ঘটে। কয়েকদিন পরের কথা। জাহানারা বেগম আমাকে বলল, বাবা মাছ বলেছে- তুমি মহা বোকা।

এই কথায় আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। কারণ আমি বুঝলাম। এই কথাটা মাছের কথা না। আমার মেয়ের কথা। সে তার মা’র কাছে শুনেছে। শিশুর কথা শিখে বড়দের শুনে শুনে। আমার এক বন্ধুর ছেলে, নাম জহির। সে দু’বছর বয়সেই সবাইকে ‘শালা’ বলে। কারণ আমার বন্ধু কথায় কথায় শালা বলে। বাবার কাছে শুনে শুনে শিখেছে। যাই হোক আমি শারীরিক শান্তির পক্ষের লোক। কথায় আছে spare the cane and spoil the child. বেতের চল উঠে গেছে বলে শিশু সম্প্রদায় এখন টেলিভিশনে আসক্ত হয়ে অধঃপতনের দোরগোড়ায়। ঢাকা শহরে বেত পাওয়া যায় না।

আমি মুনশিগঞ্জের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বেত জোগাড় করে ঘরে রেখেছি। প্রধান শিক্ষকের নাম ইমামউদিন। আমার বন্ধুস্থানীয়। সম্প্রতি উমরা হজ করেছেন। আমার জন্যে এক বোতল জমজমের পানি এবং মিষ্টি তেঁতুল এনেছেন।

যে কথা বলছিলাম, আমি বেত্ৰাঘাতের মাধ্যমে মেয়েকে কিঞ্চিৎ প্রহার করলাম। এবং ঠিক করলাম মাছ বিদায় করব। যে দোকান থেকে কিনেছিলাম সেখানে কম মূল্যে বিক্রির চেষ্টা করব। তারা যা দিবে সেটাই লাভ। অবাক কাণ্ড দেখি মাছের জার আছে। পানি আছে মাছ দুটা নাই। মাছ যাবে কোথায়? একবার ভাবলাম আমার স্ত্রী লুকিয়ে রেখেছে। পরমুহুর্তেই মনে হলো সে কেন খামাখা লুকিয়ে রাখবে? সে তো জানে না যে আমি মাছ ফেরত দেবার পরিকল্পনা করেছি। তাহলে অন্য কোনো বাড়ির বিড়াল এসে কি মাছ খেয়ে ফেলেছে? এই যখন ভাবছি তখন হঠাৎ দেখি মাছের জারে মাছ ঠিকই আছে। সাতার দিচ্ছে। ডিগবাজি খাচ্ছে।

ঘটনা কিছুই বুঝলাম না। তাহলে কি চোখে ধান্ধা লেগেছিল? তা কি করে হয়। সবার চোখে একসঙ্গে ধান্ধা লাগে কি করে অবশ্য জাদুকর পিসি সরকার একবার সবার চোখে একসঙ্গে ধান্ধা লাগিয়েছিলেন। ম্যাজিক শো হবে। হল ভর্তি লোক। সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবার কথা। ন’টা বেজে গেছে। পিসি সরকারের খোেজ নেই। দর্শকরা বিরক্ত ৷ হৈচৈ হচ্ছে। এমন সময় পিসি সরকার মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। দর্শকরা চিৎকার করে বলছে- দুই ঘণ্টা লেট। দুই ঘণ্টা লেট। পিসি সরকার বললেন, দুই ঘণ্টা লেট কেন বলছেন? আপনারা ঘড়ি দেখুন। এখন সাতটা বাজে। সবাই নিজের নিজের ঘড়ি দেখল। সবার ঘড়িতে সাতটা বাজে। সবাই একসঙ্গে হাততালি দিল।

এখন ভাই সাহেব। আপনি বলুন মাছ দুটা তো পিসি সরকার না যে ম্যাজিক দেখাবে। অত্যন্ত চিন্তিত বোধ করলাম। দশদিন পরের কথা, ঘরে তালা দিয়ে সবাইকে নিয়ে বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছি। আমার স্ত্রীর বাল্যকালের বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে। আমার স্ত্রী চাচ্ছিল একটা শাড়ি দিতে। শাড়ি না দিলে তার না-কি মান থাকে না। আমি তাকে ধমক দিয়ে বলেছি বিয়ের উপহারে মানসম্মান নির্ভর করে না। আড়াইশ’ টাকা দিয়ে মন সিরামিকের একটা টি সেট দিয়েছি।

যে কথা বলছিলাম, দাওয়াত খেয়ে বাসায় এসে দেখি মাছ দুটা নাই। আগের মতো হয় কি-না। অর্থাৎ মাছ দুটা ফিরে আসে কি-না এটা দেখার জন্যে অনেকক্ষণ মাছের জারের সামনে আমি এবং আমার স্ত্রী বসে ঘুমের প্রস্তুতি শুরু করলাম। মাছ ফিরে এলো না। তখন মিষ্টি পান খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। পান আমি খাই না। দাঁত নষ্ট করে। বিয়ে বাড়িতে পান-সিগারেট দিচ্ছিল। আমি নিয়ে এসেছি। সিগারেটটা রেখে দিয়ে পানটা খেলাম। সিগারেট ধরাব কি ধরাব না ভাবছি। না ধরালে নষ্ট করা হয়। আর ধরলে আয়ু ক্ষয়। এক পত্রিকায় পড়েছি– একটা সিগারেট এক ঘণ্টা আয়ু কমায়।

দুটা টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিব এই যখন ভাবছি তখন কাজের মেয়ে এসে বলল, খালুজান মাছ দুইটা ফিরা আসছে। আমার কাজের মেয়েটার নাম জাইতরি। তাকেও বিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তার স্যান্ডেল’ছিড়ে গিয়েছিল। খালি পায়ে তো আর বিয়ে বাড়িতে যাওয়া যায় না। ত্ৰিশ টাকা দিয়ে স্যান্ডেল কিনে দিয়েছিলাম। স্যান্ডেল সাইজে ছোট হয়েছে বলে অনেকক্ষণ সে ঘ্যানঘ্যান করেছে। আমি কি আর জানি মেয়ে মানুষের পা এত বড় হয়? এইটুকু এক মেয়ে তার এক ফুট লম্বা পা। চিন্তা করেন। অবস্থা। ধাবিড়াতে ইচ্ছা করে।

জাইতরির কথায় মাছের জারের কাছে গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি মাছ দুটা ঘুরছে। তখন আমার স্ত্রী বলল, মাছ দুটা মিসির আলি সাহেবকে দিয়ে আসো। তিনি রহস্য সমাধান করবেন। সে-ই কোথেকে যেন আপনার ঠিকানা এনে দিল। রহস্য সমাধানের আমার প্রয়োজন নাই। দোষী মাছ বিদায় করতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। ভাই সাহেব আমি উঠি।

ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, আমি আক্ষরিক অর্থেই হাঁফ ছাড়লাম। ভদ্রলোক দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে বললেন, সিগারেটটা রাখেন।

আমি বললাম, কিসের সিগারেট?

বিয়ে বাড়ি থেকে এনেছিলাম যে সেই সিগারেট। ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম। ড্যাম্প হয়ে গেছে মনে হয়। খেতে না চাইলে রেখে দিন। সিগারেটখোর কোনো ভিক্ষুক পেলে দিয়ে দিবেন। অনেক ভিক্ষুক দেখেছি বিড়ি-সিগারেট ফুকে। পেটে নাই ভাত নেশার বেলা ষোল আনা।

ভদ্রলোক বিদায় নেবার দুঘণ্টা পর আবার এসে উপস্থিত। মাছের জার ফেরত চান। তার মেয়ে না-কি মাছের শোকে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় রেখেই তিনি মাছ নিতে সিএনজি ভাড়া করে এসেছেন।

আমার হাতে একশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে তিনি জার হাতে ট্যাক্সিতে উঠলেন। এক মিনিটও দেরি করলেন না।

আমি এই গল্পটি আমার Unsolved খাতায় তুলে রেখেছি কারণ ভদ্রলোক তার চরিত্র, কথার ভেতর পুরোপুরি প্রকাশ করেছেন। এই জাতীয় মানুষ কখনো মিথ্যা বলে না। বানিয়ে কিছু বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার তো প্রশ্নই আসে না। এই চরিত্রের মানুষরা নিজেরা বিভ্রান্ত হতে চায় না, অন্যদেরও বিভ্ৰান্ত করতে চায় না। প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে তারাই সবচে’ বেশি বিভ্রান্তিতে পড়ে। তাদের জারের মাছই হঠাৎ কোথাও চলে যায়। আবার ফিরে আসে। বিপুল এই বিশ্বের আমরা কতইবা জানি?

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments