Monday, June 30, 2025
Homeমজার গল্পহাসির গল্প – গোপ্পার বউ

হাসির গল্প – গোপ্পার বউ

হাসির গল্প – গোপ্পার বউ

গোপ্পাকে লইয়া পাড়ার লোকের হাসি তামাশার আর শেষ নাই। কেহ তাহার মাথায় কেরাসিন তৈল মালিশ করিতে ছুটিয়া আসে, কেহ তাহার গায়ে ধূলি দেয়। তবু তার গল্প থামে না। জোয়ারের পানির মতো তাহার মুখ হইতে সব সময় নানারকম মিছা আজগুবি গল্প বাহির হইয়া আসিতে থাকে।

“আজ মাঠে যাইয়া দেখি এক আজদাহা সাপ! আমাকে দেখিয়া সাপ ত তাড়িয়া আসিল। আমিও দে ছুট– সাপও আমার পিছে পিছে। দৌড়াইতে, দৌড়াইতে, দৌড়াইতে আছাড় খাইয়া পড়িয়া গেলাম। পট-ফণা মেলিয়া সাপ আমাকে ছোবল দেয়ই আর কি! তখন আমি কি করি? তাড়াতাড়ি এক লাফে সাপের ফণার উপর চড়িয়া বসিলাম। সাপ তখন ছুটিয়া চলিল। আমি ত ফণার উপর বসিয়াই আছি। ছুটিয়া যাইয়া সাপ ঢুকিল এক শাপলা-বিলে। আমি সাপের ফণার উপর বসিয়াই চারটি শাপলাফুল ছিড়িয়া ফেলিলাম। তারপর সাপের ফণাটা ঘুরাইয়া ধরিলাম বাড়ির দিকে। ওই আম-বাগানতক আসিয়া সাপ খোড়লে (গর্তে) ঢুকিল। আমি শাপলাফুল কয়টি লইয়া তোমাদের এখানে আসিলাম। তোমরা সাপের কথা সাঁচা (সাচ্চা বা সত্য) না মনে করিলে আম-বাগানের ওখানে খুঁড়িয়া দেখিতে পার, আর আমার হাতের শাপলাফুল ত দেখিতেই পাইতেছ।”

সুতরাং তার কথা সাঁচা না মানিয়া আর উপায় আছে? কে যাইবে সাপের খোড়ল খুঁজিতে!

এইরূপ গল্পের আর শেষ নাই। কোনোদিন সে আসিয়া বলে, “মৌমাছির চাক কুলগাছের উপর। তার উপরে যাইয়া বসিয়া পড়িলাম। অমনি মৌমাছির দল মৌচাক লইয়া আসমানে উড়িতে লাগিল। আমি ত চাকের উপরে বসিয়াই আছি। উড়িতে – উড়িতে – উড়িতে আসমানে চলিয়া গেলাম। সেখানে নীল মেঘ, কালো মেঘের দেশ। তারও উপরে সাঁঝ-মণির বাড়ি। চারিদিকে লাল রঙের পাহাড়। সেখান হইতে চলিয়া গেলাম সাত গাঙের (নদীর) ধারে। সেখানে রাজার মেয়ে জোনাকি ধরিয়া মালা গাঁথিতেছে। তারই কাছ হইতে তিনটি জোনাকি ধরিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিলাম।”

শুনিয়া সকলে বলে, “বাড়ি কেমন করিয়া ফিরিলে? আসমান হইতে লাফাইয়া পড়িলে নাকি?” গোপপা কোনো জবাব দিতে পারে না। পাড়ার লোকেরা তাকে তাড়া করিয়া ফেরে। ছোটরা তবু গোপ্পাকে বড়ই ভালবাসে। হোক তার গল্প মিছা আজগুবি, তবু শুনিতে ত খারাপ লাগে না!

গোপার বউ বড় ভাল মানুষ। দেখিতেও খুব খুবছুরত (খুব সুন্দর), আর তার কথা-কওয়া, চলন বলন আরও চমৎকার; তবু সবাই তাহাকে দেখিলে বলে, “এই যে গোপপার বউ আসিল।”

গোপ্পা যেখানে যত মিছা আজগুবি গল্প বলে তাহাই নানা ভঙ্গি করিয়া লোকে গোপপার বউকে বলে; আর নানা রকমের হাসি তামাশা করে।

বেচারি কত আর সয় (সহ্য করে)?

সেদিন গোপপা বউকে খুশি করিবার আশায় মনে মনে একটি চমৎকার আজগুবি গল্প বানাইয়া আনিয়াছিল, বাড়ি আসিয়া বউ-এর মুখের দিকে চাহিয়া বড়ই মনমরা হইয়া পড়িল।

সে কহিল, “কি হইয়াছে বল ত?”

বউ ঠেস দিয়া উঠিয়া বলিল, “কি হইয়াছে বুঝিতে পার না? এই যে পাড়ায় পাড়ায় মিছা আজগুবি গল্প বানাইয়া বানাইয়া বলিয়া বেড়াও, লোকের টিটকারিতে ত আমি ঝালাপালা হইয়া পড়িলাম। আমাকে যে দেখে সে-ই বলে, ওই যে গোপপার বউ আসিল।”

বউয়ের দুখ দেখিয়া গোপপার মনটা বড়ই খারাপ হইয়া পড়িল। সে বউকে কহিল, “বল ত আমাকে কি করিতে হইবে?”

বউ বলিল, “করিতে আর কি হইবে? তুমি তোমার ওই গলপের ছালা কোথাও ফেলিয়া দিয়া আস।”

অনেকক্ষণ ভাবিয়া গোপ্পা বলিল, “কাল সকালে আমি সামনের ওই পাহাড়টার ওখানে যাইয়া গল্পের ছালা (বস্তা) ফেলিয়া দিয়া আসিব। সেখানে অনেক বাঘ-ভালুক থাকে, বড়ই বিপদের পথ। আর ফিরি কি না ফিরি কে জানে? তবু যাব সেখানে কাল।”

বউ বলিল, “তুমি ফের বা না ফের তার ধার ধারি না। গল্পের ছালা তোমাকে ফেলিয়া আসিতেই হইবে।”

রাগের মাথায় একথা বলিলে কি হইবে? সাঁচা ত মনে হয় না, তবু যদি সেখানে বাঘ-ভালুকের ভয় থাকে! বউ সকালে উঠিয়া ভালমতো পাক করিয়া দুধে-ভাতে গোপপাকে পেট ভরিয়া খাওয়াইয়া দিল। খাইয়া-দাইয়া পান চিবাইতে চিবাইতে গোপা গপের বোঝা ফেলিয়া আসিতে দূর পাহাড়ের পথে রওয়ানা হইল। পথে যাইতে এমন ভঙ্গি দেখাইয়া চলিল যেন কত বড় বোঝাটা সে মাথায় করিয়া লইয়া চলিয়াছে।

সাঁঝের বেলা গোপপা ফিরিয়া আসিল। বউ কহিল “গলপের ছালা একেবারে উজাড় করিয়া ফেলিয়া দিয়া আসিয়াছ ত?”

গোপ্পা বলিল, “ফেলিতে কি পারিলাম? আমি ত ওই পাহাড়ের কাছে গিয়াছি, অমনি এক বাঘ আসিয়া দিল আমাকে তাড়া। আমিও দৌড়! বাঘ ও আমার পাছে পাছে (পিছনে) দৌড়। দৌড়াইতে – দৌড়াইতে – দৌড়াইতে পাহাড়ের গোড়ায় যাইয়া পড়িলাম। সামনে আর পথ নাই। বাঘ ত একেবারে কাছে আসিয়া পড়িয়াছে। জানের ভয়ে কি আর করি? সামনে দেখিলাম একটি কচুগাছ। তার ডাল ধরিয়া উপরে উঠিতে লাগিলাম। বাঘও আমার পিছে পিছে উঠিতে লাগিল। উঠিতে উঠিতে আরও উঠিলাম– আরও উঠিলাম। বাঘও উঠিতে লাগিল। আমিও উঠিতেছি— বাঘও উঠিতেছে, আমিও উঠিতেছি— বাঘও উঠিতেছে। তারপর আমাদের দুইজনের ভারে কচুগাছের ডাল গেল ভাঙিয়া। পড়ি ত পড়ি একেবারে তোমার ভাইদের বাড়ির সামনে যাইয়া পড়িলাম। তোমার ভাই-এর বউ আজ মুরগি পাক করিয়াছিল, আর চিতই পিঠা। তাই খাইয়া বাড়ি ফিরিলাম!”

গল্প শুনিয়া গোপার বউ হাসি গোপন করিয়া বলিল “ওমা! তোমাকে পাঠাইলাম গল্পের ছালা ফেলিয়া দিয়া আসিতে, আর তুমি কিনা, আর এক ছালা গল্প মাথায় করিয়া বাড়ি ঢুকিলে!”

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments