খলিফা উমর(রা)-এর ন্যায়বিচার এর কাহানী
এক সময়ের কথা। মিসর ছিল মুসলিম শাসনের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন সাহাবী আমর ইবনুল আস(রা), ইসলামের এক মহান বীর, যিনি মিসর বিজয়ের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন।
তার শাসনামলে মিসরের মানুষ বেশ সুখে-শান্তিতে ছিল। মুসলিম, খ্রিস্টান, ধনী-গরিব সবাই মোটামুটি নিরাপদ জীবন যাপন করছিল।
কিন্তু তার ছিল এক ছেলে, সে ছিল খুব অহঙ্কারী। সে ভাবত, আমি তো গভর্নরের সন্তান, আমাকে কেউ কিছু বলার সাহস রাখে না।
একদিন সেই ছেলেটি এক গরিব খ্রিস্টান ছেলেকে বিনা কারণে মারধর করল। শুধু নিজের প্রভাব খাটানোর জন্য, সে ছেলেটির সম্মানহানিকর আচরণ করল।
খ্রিস্টান ছেলেটি ছিল খুব গরিব। তাই সে কিছুই বলতে সাহস করল না। গভর্নরের ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস তার ছিল না।
কিছুদিন পরে একজন মদীনা ফেরত প্রতিবেশী এসে বলল, তুমি কি জানো, মদীনায় ইসলামের ২য় খলিফা উমর (রা) একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি মুসলিম-অমুসলিম, ধনী-গরিব সবাইকে সমান চোখে দেখেন। কারো প্রতি অন্যায় হলে তিনি তা সহ্য করেন না।
এই কথা শুনে খ্রিস্টান ছেলের মনে সাহস আসে। সে একাই পায়ে হেঁটে সতেরো দিনের দীর্ঘ সফর করে মদীনায় আসে।
সে খলিফা উমর (রাঃ)-এর দরবারে হাজির হয়ে তার কষ্টের কথা খুলে বলে। খলিফা উমর (রাঃ) ধৈর্য নিয়ে সব শোনেন এবং সাথে সাথে নির্দেশ দেন, আমর বিন আ’স ও তার ছেলেকে মদীনায় তলব করলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই গভর্নর ও তার ছেলে মদীনায় আসেন।
খলিফা উমর (রাঃ) সবার সামনে বিচার বসালেন। প্রমাণ ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হল। বিচারে প্রমাণিত হল, গভর্নরের ছেলেটিই দোষী।
খলিফা এবার বললেন, এই খ্রিস্টান ছেলে, তুমি গভর্নরের ছেলের উপর প্রতিশোধ নাও, যেমন করে সে তোমার প্রতি অন্যায় করেছিল, তেমন ভাবেই তুমি প্রতিশোধ নাও।
ছেলেটি সাহস নিয়ে সেই অপরাধীর উপর প্রতিশোধ নিল, অর্থাৎ, তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার পেল ন্যায়বিচারের মাধ্যমে।
খলিফা উমর (রাঃ) এরপর গভর্নরের ছেলেকে বললেন, তোমাকে কিসে এমন সাহস দিল, যে তুমি একজন গরিব মানুষকে অন্যায়ভাবে মারবে?
তিনি পিতাকেও সতর্ক করলেন, মানুষের ওপর অন্যায় করতে দিলে, বাবা হিসেবে তুমিও দায়ী হবে।