ইসলামিক কাহিনী – সততাই ধর্ম
উমাইয়া বংশের অষ্টম খলিফা। নাম তার ওমর ইবনে আবদুল আজিজ। তিনি ছিলেন খুবই ন্যায়পরায়ন। তিনি দ্বিতীয় ওমর নামে পরিচিত। ঈদুল ফিতরের দিন। ঘরে ঘরে আনন্দের সাড়া পড়ে গেছে। মুসলমানরা ভাল ভাল পোষাক পরে দামেশ্ক নগরীর রাজপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিশুরা ঝলমলে পোষাক পরে ছুটাছুটি করছে।
খলিফা -দ্বিতীয় ওমর নিজের কক্ষে আল্লাহর এবাদত করছেন। এমন সময় সেখানে ঢুকলেন তাঁর বেগম বিবি ফাতিমা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তাঁদের ছেলেরা। খলিফার ধ্যান ভেঙ্গে গেলো।
তিনি তাঁর বিবি ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি হয়েছে, বেগম। ছেলেদের নিয়ে এখানে হাজির হলে যে!
বেগম বললেনঃ ছেলেরা কাল রাতে আমাকে ঘুমুতে দেয়নি। ওরা উজিরে আজমের বাড়িতে গিয়ে দেখে এসেছে, সে বাড়িতে ছেলেদের জন্যে ঈদের জামা-কাপড় তৈরি করা হয়েছে। তাই দেখে ছেলেরা বায়না ধরেছে, তাদেরও অমন নতুন নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতে হবে। অমি তাই ওদের আপনার কাছে নিয়ে এসেছি।
খলিফা নীরবে শুনলেন তাঁর বেগমের কথা। তারপর জিজ্ঞেস করলেনঃ বেগম, ওদের কি পরার মত জামা-কাপড় নেই?
বেগম জবাব দিলেনঃ ওদের যে একবারেই পরার মত জামা কাপড় নেই তা নয়। তবে ওরা নতুন জামা- কাপড়ের জন্যে বায়না ধরেছে।
খলিফা বললেনঃ এখন আমার পক্ষে নতুন জামা-কাপড় কেনা একেবারেই সম্ভব নয়। আমি বায়তুল মাল থেকে দৈনিক মাত্র দুই দেরহাম পাই। আমি তার বেশী কি করে খরচ করতে পারি! এই সম্পত্তিতো আমার নয়।
বেগম বললেনঃ আপনার কাছে আরজ, আপনি আজকের দুই দেরহাম ও আগামীকালকের দুই দেরহাম, মোট চার দেরহাম বায়তুল মাল থেকে তুলে দিন। আমি এখ্খুনি ছেলেদের জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করি।
খলিফা জবার দিলেনঃ আগামীকালতো এখনও আসেনি, আজকের দিনটিও শেষ হয়ে যায় নি। তাই আমার পক্ষে বায়তুল মাল থেকে এক কপর্দকও তুলে আনা সম্ভব নয়। তুমি আমাকে এই অনুরোধ করোনা।
বেগম আবার বললেনঃ আপনি তো রাজাধিরাজ (রাজাদের রাজা), রাজ্যের সর্বময় কর্তা। কিছু অর্থ গ্রহণের কি অধিকার আপনার নেই?
খলিফা জবাব দিলেনঃ আমি আমার দেশ ও মানুষের তত্ত্ববধায়ক মাত্র। আমি দু’দিনের তত্ত্বাবধানের কাজ শেষ করেই কেবল দু’দিনের বেতন নিতে পারি। আমি অগ্রিম চার দেরহাম গ্রহণ করবো কেমন করে? আমি যে আজ থেকে দু’দিন বেঁচে থাকবো, তার নিশ্চয়তা আছে কি?
বেগম এ কথার পর আর কিছু বলতে পারলেন না। ছেলেদের নিয়ে নীরবে খলিফার কক্ষ ত্যাগ করলেন।