Friday, June 20, 2025
Homeমজার গল্পকালমেঘ – তারাপদ রায়

কালমেঘ – তারাপদ রায়

কালমেঘ – তারাপদ রায়

বঙ্গাব্দ তেরোশো ছিয়াশি।

রোববার ফাল্গুন মাস শেষ সপ্তাহ, সকাল সাড়ে দশটা।

বাইরের তিন কোনাচে ঘরে পুরনো বেতের চেয়ারে বসে পা দোলাতে দোলাতে মহিমাময় দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

এ বছর দোল পড়েছে মাসের দ্বিতীয় শনিবারে। একটা চমৎকার ছুটি বেঘোরে মারা গেল। শুধু তাই নয়, রোববারের আড়াটাও মারা পড়েছে। বন্ধুবান্ধব, জানাশোনা সবাই গেছে শান্তিনিকেতনে, বসন্ত উৎসবে। কেউ কাল সকালের আগে ফিরছে না। অথচ সুন্দর ফাল্গুন মাস। হালকা ফিকে রসুনের মতো একটু একটু ঠান্ডার আস্তরণ এখনও দিনের গায়ে জড়ানো আছে। আর সেই সঙ্গে সেই বিখ্যাত দক্ষিণের ফুরফুরে বাতাস, এই তো কলকাতার সবচেয়ে ভাল সময়।

এই সময়ে কেউ কলকাতা ছেড়ে বাইরে যায়! তাও আবার এই বুড়ো বয়সে শান্তিনিকেতনের বসন্ত মেলায়! মনে মনে তিনবার বন্ধুদের ধিক্কার দিলেন মহিমাময়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জিবটা কেমন যেন খরখর করছে, গলা থেকে তালু পর্যন্ত মুখটা শুকিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির মধ্য থেকে মহিমাময়ের স্ত্রী ভেতরের দরজার পর্দা তুলে স্বামীকে একা বসে ঘন ঘন পা দোলাতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এক পেয়ালা চা খাবে নাকি? তাড়াতাড়ি বলল, উনুনে জল বসাচ্ছি

চায়ের কথাটা শুনে মহিমাময়ের মাথাটা বেশ গরম হয়ে গেল। বেশি বাক্যবিনিময়ে না গিয়ে তিনি শুধু সংক্ষিপ্ত ও সুগম্ভীর জবাব দিলেন না।

নিরাসক্তের মতো আর একবার দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালেন মহিমাময়। এগারোটা বাজতে চলল। বাইরে নতুন এক টাকার কয়েনের মতো ঝকঝকে রোদ, দূরে ত্রিকোণ পার্কে না কি কোনও বাড়িতে একটা পোষা কোকিল ভোর থেকে ডাকছে তো ডাকছেই। নবীন বসন্তের মনোরম উষ্ণতায় চারদিক মেতে উঠেছে। এইরকম সুন্দর ছুটির দিনে কোনও ভদ্রলোক দুপুরবেলায় বাড়িতে বসে চা খায়! কোথাও গাছের ছায়ায় ফুরফুরে বাতাসে বসে বিয়ারের সোনালি তরলতায় চুমুক দিতে দিতে আজ হল নব বসন্তকে অভ্যর্থনা জানানোর দিন।

পাজামার উপরে গায়ে একটা পাঞ্জাবি চাপিয়ে ধুত্তোরি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন মহিমাময়। কিন্তু একা একা আর কতদূর কোথায় যাবেন? আর সবচেয়ে বড় কথা, রাস্তাঘাট এখনও তেমন নিরাপদ হয়নি। আজ কয়েক বছর হল বড়বাজারওয়ালারা উঠে এসেছে দক্ষিণ কলকাতার বহুতল বাড়িগুলিতে। সেখানে হিন্দুস্থানি আর রাজস্থানিদের হোলি হো, হোলি হ্যায়, এখনও পুরোদমে চলেছে। কোথায় কোন অলিন্দ কি গবাক্ষ থেকে চপলা তরুণী রাজপথের অসহায় পদাতিকের গায়ে ফাগ কিংবা ইনডেলিবল কুমকুম ছুঁড়ে মারবে তা বলা যায় না।

ইতস্তত গলির মোড়ের দিকে এগোতে এগোতে সহসা মহিমাময় দেখলেন খুব চেনা একটা লোক তার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বড় রাস্তা থেকে এগিয়ে আসছে।

আগন্তুকের চুলে-মুখে নানারঙের আবির, গায়ের হাওয়াই শার্ট আর ফুল প্যান্টও বহুবর্ণরঞ্জিত, উজ্জ্বল রঙে এমন ঢাকা পড়ে গেছে অবয়ব ও গঠন যে বেশ কাছে না আসা পর্যন্ত মহিমাময় বুঝতে পারলেন না–তার বন্ধু জয়দেব আসছেন।

জয়দেবকে দেখে মহিমাময় যুগপৎ খুশি ও বিস্মিত হলেন। তাহলে যে শুনেছিলেন জয়দেব শান্তিনিকেতনে গেছে, গিয়েছিল হয়তো, আজই ফিরছে!

কাছে আসতে জয়দেবকে মহিমাময় জিজ্ঞাসা করলেন, তুই শুনলাম শান্তিনিকেতনে গিয়েছিস?

জয়দেব বললেন, কী করে যাব? পরশুদিন রাত থেকে আমি কেজরিওয়ালের বাড়িতে আটকে আছি!

মহিমাময় কেজরিওয়ালকে চেনেন না, জয়দেবের সমস্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির খবর রাখা কারও সাধ্য নয়। সুতরাং মহিমাময় প্রশ্ন করলেন, কেজরিওয়াল কে?

তিনরঙের আবির মাখা ঘাড় চুলকোতে চুলকোতে জয়দেব বললেন, তুই চিনবি না। বড় ব্যবসা করে, বলপেনের রিফিল বানানোর যন্ত্র তৈরির মেশিনের পাইকারি কারবার করে। তা ছাড়া…

ঠিক আছে, যথেষ্ট হয়েছে, আর লাগবে না কেজরিওয়ালের অন্য ব্যবসা সম্পর্কে উৎসাহ না দেখিয়ে জয়দেবকে মধ্যপথে থামিয়ে দিয়ে মহিমাময় বললেন, তা এরকম রং খেললি কোথায়? কেজরিওয়ালের বাড়িতে?

জয়দেব করুণ কণ্ঠে বললেন, আরে না! ওই কেজরিওয়ালদের ওখানে কাল দুপুরে গানবাজনা, খাওয়া-দাওয়া হল। অল্পস্বল্প আবির ছিল, কিন্তু আসল গোলমালটা হল রাতে।

মহিমাময় বললেন, রাতে কী হল?

জয়দেব লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন, সে মহা বেকায়দা। সন্ধ্যাবেলা আমি ওদের বাড়িতে বাইরের ঘরে ঘুমোচ্ছি, কেজরিওয়ালার আত্মীয়স্বজন কাঁদের বাড়িতে যেন গেছে। আমি ঘুম ভেঙে উঠে দেখি ওদের আউট হাউসে চাকর ড্রাইভারেরা বড় বড় পিতলের লোটায় কী সব খাচ্ছে। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে সেখানে গিয়ে বসলাম। চমৎকার ভাঙের শরবত, সবাই খুশি হয়ে আমাকে খাওয়াতে লাগল। তারপরে অল্প অল্প মনে পড়ছে–হই-হুঁল্লোড়, নাচগান, রং। একটা মোটামতন

টিকি মাথায় লোক আমাকে কাঁধে নিয়ে অনেকক্ষণ বেরিলিকা বাজারমে… গাইতে গাইতে খুব নাচল। তারপর ভাল মনে পড়ছে না। এই আধ ঘণ্টা আগে ঘুম ভেঙে দেখি দারোয়ানদের ঘরের পাশে একটা দড়ির খাঁটিয়ায় ডুমুর গাছের নীচে শুয়ে আছি, গায়ে-মাথায়, জামা কাপড়ে রং মাখা।

আর বেশি বলার দরকার ছিল না। মহিমাময় ব্যাপারটা অনেকখানিই বুঝলেন। এবার প্রশ্ন করলেন, তা এরকম ভূতের মতো বেশে কোথায় যাচ্ছিস?

জয়দেব বললেন, কেন, তোর ওখানে? চল, একটু বসা যাক!

মহিমাময় একটু ভেবে বললেন, কিন্তু তোর কি ভাঙের নেশা এখনও কেটেছে? চোখ তো জবাফুলের মতো লাল দেখছি।

জয়দেব বললেন, আরে ধ্যুৎ, ভাঙে আবার নেশা হয় নাকি! চোখ লাল হয়েছে বেশি ঘুমিয়ে। তারপর একটু থেমে নিয়ে বললেন, বাড়িতে কিছু আছে?

মহিমাময় বললেন, বাড়িতে একটু আধটু তলানি পড়ে আছে। সেসবে হবে না। আর আজ বিয়ার খাওয়ার দিন। আবহাওয়া দেখছিস না, বসন্তকালের দুপুরে বিয়ার ছাড়া খাওয়া যায়?

জয়দেব গম্ভীর হয়ে বললেন, মহিমা, তোর বয়েস কত হল?

প্রশ্নের গতিক দেখে একটু হকচকিয়ে গিয়ে মহিমাময় বললেন, কেন, এই অঘ্রানে বেয়াল্লিশ পূর্ণ হল!

জয়দেব বললেন, তা হলে তোর থেকে আমি আড়াই বছরের বড়, আমার বয়েস হল সাড়ে চুয়াল্লিশ। তারপর একটু থেমে থেকে বেশ বড় রকমের একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে জয়দেব এগিয়ে এসে মহিমাময়ের কাঁধে হাত রাখলেন, অবশেষে বললেন, আমাদের কি আর বয়েস আছে রে বিয়ার খাওয়ার? আমরা তো বুড়ো হয়ে গেছি। বিয়ার খাবে তো বাচ্চা ছেলেরা।

এরকম আশ্চর্য কথা শুনে মহিমাময় কিছু বুঝতে না পেরে বললেন, বাচ্চা ছেলেরা খাবে মায়ের বুকের দুধ, ফিডিং বোতলের দুধ, নিদেনপক্ষে গোরুর দুধ গেলাসে বা কাপে করে। তারা বিয়ার খাবে কেন?

জয়দেব মধুর হেসে বললেন, আরে না না, অত বাচ্চা নয়। অন্নপ্রাশনের কুড়ি বছর পর থেকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত গাঁজা, ভাং, চুরুট, দোক্তা, বিয়ার, তাড়ি যা তোক একটা লোক খাক, খেয়ে যাক, কিছু আসে যায় না। কিন্তু যেই মানে মানে চল্লিশ পার হয়ে গেলি, তখন তোকে মানে মানে। ভেবেচিন্তে চলতে হবে। এমনকী সর্ষেবাটা সজনোটা চিবনোর আগে ভেবে নিতে হবে কটা উঁটা চিবনো ঠিক হবে।

জয়দেবের এরকম বয়সোচিত বক্তৃতা শুনে মহিমাময় অধৈর্য হয়ে পড়লেন, জয়দেবকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, স্টপ জয়দেব! অলরাইট, বিয়ার নয়, একটু আগে বাড়িতে দেখে এসেছি বউ চা করছে। চল দুজনে গিয়ে দু পেয়ালা চা খাই। এরপর থেমে গিয়ে মহিমাময় দুটি দন্তপাটি কিড়মিড় করে স্বগতোক্তি করলেন, এমন সুন্দর দিনটা জলে গেল! এবং সঙ্গে সঙ্গে তার খেয়াল হল, জলে নয়, বিনা জলে গেল!

ততক্ষণে জয়দেব মহিমাময়কে স্বগতোক্তি করা থেকে নিবৃত্ত করেছেন, তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, এই ভরদুপুরে চা খাবে কোন শালা? আমার সঙ্গে চল, এক বোতল জিন কিনে আনি।

মহিমাময় এই অবস্থায়ও রফা করার চেষ্টা করলেন, জিন খাওয়া যাবে না। বিটারস ফুরিয়ে গেছে।

জয়দেব এখন রীতিমতো উত্তেজিত, বললেন তুই একেবারে সাহেব হয়ে গেছিস মহিমা, বিটারস দিয়ে কী হবে? আর বিটারসের কী দাম জানিস?

বলা বাহুল্য, এত তর্কাতর্কির মধ্যেও জয়দেব এবং মহিমাময় ইতিমধ্যে বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের অজান্তে গড়িয়াহাটের চৌমাথায় মদের দোকানের সামনে এসে গেছেন। এবার জয়দেব নির্দেশ দিলেন, মহিমা, তুই এক কাজ কর, সামনের ওষুধের দোকান থেকে তুই এক বোতল কালমেঘ নিয়ে আয়। ততক্ষণে আমি এখান থেকে জিনটা কিনে ফেলছি।

কিছুই অনুধাবন করতে না পেরে মহিমাময় সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ভিক্টোরিয়া ফার্মেসি থেকে সাড়ে সাত টাকা দিয়ে এক শিশি কালমেঘ কিনে আনলেন, ততক্ষণে জয়দেব জিনের বোতল কিনে ফুটপাথে নেমে এসেছেন।

দুজনে মিলে বাড়িমুখো হাঁটতে হাঁটতে মহিমাময় জয়দেবের কাছে জানতে চাইলেন, কালমেঘ দিয়ে কী হবে? তোর কি লিভার খারাপ হয়েছে? তারপর বেশ ভেবে নিয়ে বললেন, লিভার খারাপ হলে মদ খাবি কেন? শুধু শুধু কালমেঘ খেয়ে কি সুরাহা হবে?

জয়দেব এবার চটে গেলেন, লিভার খারাপ হবে কেন আমার? আমার লিভার পাথরের মতো শক্ত। কালমেঘ লিভারের জন্যে নয়, ওটা নেওয়া হল জিন খাওয়ার জন্যে।

মহিমাময় বেশ অবাক হলেন, এই তেতোর তেতো কালমেঘ দিয়ে জিন! এর থেকে কুইনিন মিক্সচার খাওয়া ভাল!

এতক্ষণে ওঁরা দুজনে মহিমাময়ের বাড়ির দরজায় পৌঁছে গেছেন। ঘরে ঢুকে মহিমাময় তাড়াতাড়ি বাড়ির মধ্যে গিয়ে এক বোতল ঠান্ডা জল আর দুটো গেলাস নিয়ে এলেন।

এবার ঢালাঢলির পালা জয়দেবের। তিনি জিনের বোতলটা খুলে দু গেলাসে দু আঙুল পরিমাণ নিয়ে তার মধ্যে জল মেশালেন, তারপর সত্যি সত্যি ওই কালমেঘের শিশিটা খুলে দু গেলাসে দু ফোঁটা ঢেলে দিলেন। তারপর এক গেলাস মহিমাময়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, নে, খেয়ে দ্যাখ, মধুর মতো লাগবে।

মধুর মতো কালমেঘ? তুই কি একেবারে পাগল হয়ে গেলি জয়দেব? কাল রাতে কয় লোটা ভাং খেয়েছিস বল তো? হাতে গেলাস ধরে মহিমাময় জিজ্ঞাসা করলেন।

পরম আয়েস ও তৃপ্তির সঙ্গে একটা লম্বা চুমুকে গেলাসটা প্রায় অর্ধেক ফাঁক করে দিয়ে জয়দেব বললেন, দ্যাখ মহিমা, কালমেঘ হল দিশি বিটারস। বিলিতি বিটারসের চেয়ে ডবল ভাল। আর বিলিতি বিটারসও তেতো একটা গাছের রস। মদের মধ্যে দু ফোঁটা দিলেই এর স্বাদ বদলিয়ে যায়। আমার বড় জামাইবাবু আমেরিকায় এক ডজন সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। যাদের যাদের দিয়েছিল, তারা এখনও চিঠি লেখে, খোঁজ নেয়।

এবার মহিমাময় সন্তর্পণে তার হাতে ধরা গেলাসটা জিবে ছোঁয়ালেন। সত্যিই তো, সামান্য কালমেঘের জাদুর পরশে ঝজালো ড্রাই জিনে অমৃতের স্বাদ এসেছে।

এ ঘটনা দীর্ঘ চার বছর আগেকার।

তারপর কলকাতার রাজপথে অনেক জনস্রোত বয়ে গেছে। সে জনস্রোতে আজকাল কদাচিৎ মহিমাময়ের সঙ্গে জয়দেবের দেখা হয়। স্রোতের স্বতন্ত্র পথে নিজ নিজ ধান্দায় দুজনে দু ধারায় প্রবাহিত হন।

শহরটা তেমন বড় নয়। তাই তবুও কখনও কখনও এখানে সেখানে দেখা যায়। জয়দেবকে দেখে খুশি হন মহিমাময়। মহিমাময়কে দেখে খুশি হন জয়দেব।

জয়দেবকে মহিমাময় আমন্ত্রণ জানান, বলেন, আয় জয়দেব, বাসায় যাই। সেই কালমেঘ এখনও শিশিতে অনেকটা রয়েছে। চল, বাসায় গিয়ে একটু জিন খাই।

জয়দেব আপত্তি করেন, ধ্যুৎ, জিন পুরুষমানুষে খায় নাকি, ও তো মেয়েলি পানীয়। আর তোর ওই কালমেঘ, ওয়াক, থুঃ! কুইনিন জলে গুলে খাবি, নিমপাতা চিবিয়ে খাবি, সজনোটা উচ্ছে কাঁচা খাবি। অনেক স্বাদ পাবি।

ক্ষুণ্ণ মনে মহিমাময় বাড়ি চলে আসেন। তিন কোনাচে বাইরের ঘরের পুরনো বেতের চেয়ারে বসে পা দোলাতে দোলাতে সামনের দেয়ালে তাকের উপরে চোখ রাখেন। ওখানে কালমেঘের শিশিটা রয়েছে। এখনও ওই শিশিটার মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কালমেঘ আছে। অন্তত পাঁচ টাকার জিনিস। এই দুর্দিনে জিনিসটা নষ্ট করতে মন চায় না।

কিন্তু শিশিটা কিছুতেই ফুরোচ্ছে না। গেলাসে এক-দুই ফোঁটা, এক বোতলে পনেরো পেগ, পনেরো গেলাস। পনেরো গেলাসে পনেরো থেকে তিরিশ ফোঁটা।

গত চার বছরে কত গেলাসের পর গেলাস, বোতলের পর বোতল জিন শেষ হয়ে গেল, কিন্তু ওই কালমেঘের শিশি সদ্য গলা পর্যন্ত নেমেছে।

কালমেঘের জন্যে জিন, নাকি জিনের জন্যে কালমেঘ? একটা কঠিন ধাঁধায় পড়ে যান মহিমাময়। তারপর কাগজ-পেনসিল টেনে নিয়ে সমান কঠিন একটা অঙ্ক কষতে থাকেন।

সপ্তাহে দু বোতল জিন, একশো ষাট টাকা বছরে আট সাড়ে আট হাজার টাকা।এই চার বছরে সে অন্তত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা হবে।

এখনও বাকি যা কালমেঘ আছে তাতে আরও হাজার সত্তর টাকার জিন খেয়ে যেতে হবে। আর আট বচ্ছর–মোটমাট এক লাখ টাকার ধাক্কা!

প্রৌঢ় মহিমাময় করুণ চোখে কালমেঘের শিশিটার দিকে তাকিয়ে থাকেন। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভাবেন, একটা ছোট একতলা বাড়ি হয়ে যেত। ভাবতে ভাবতে পাঞ্জাবি গলিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন আরেক বোতল জিন আনতে।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments