শিক্ষামূলক গল্প – কাঠুরে ও রহস্যময় অন্ধকার গুহা
গ্রামের এক পাশে ছিল ঘন জঙ্গল, যেখানে রমেশ কাঠুরে প্রতিদিন কাঠ কাটতে যেত। সে ছিল পরিশ্রমী, কিন্তু ভাগ্য যেন কখনও তার সাথে ছিল না। যত কাঠই কাটুক না কেন, বিক্রি করে দুই বেলা খাবার জোগাড় করাই ছিল তার জন্য কঠিন।
একদিন সে কাঠ কাটতে কাটতে জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে যায়। খেয়ালই করেনি যে সূর্য ঢলে পড়ছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করল, আর পথও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। ঠিক তখনই তার চোখ পড়ল এক রহস্যময় অন্ধকার গুহার দিকে।
গুহার মুখে গিয়ে সে ভেতরে উঁকি দিল। হিমেল বাতাস তার মুখে আঘাত করল, আর তার শরীর কেমন যেন কেঁপে উঠল। এক অজানা ভয়ে বুক ধুকপুক করতে লাগল। তবুও, কৌতূহল সামলাতে না পেরে, সে আস্তে আস্তে অন্ধকার গুহার ভেতরে ঢুকে পড়ল।
ভেতরে ছিল ঘন অন্ধকার, কিন্তু একটু দূরে কোথাও যেন মৃদু আলো টিমটিম করে জ্বলছিল। সাহস করে সে সামনে এগোলো। হঠাৎ, মাটিতে কিছু চকচক করতে দেখল। ভালো করে তাকাতেই তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল, সোনার মোহর।
রমেশের আনন্দ আর ধরে না। এত সম্পদ দেখে তার চোখে যেন স্বপ্ন নাচতে লাগল। “আমার দারিদ্র্য এবার দূর হবে!” মনে মনে ভাবল সে। তাড়াতাড়ি করে সে নিজের জামার খুঁটে সোনার মোহর গুছিয়ে নিতে লাগল।
ঠিক তখনই অন্ধকার গুহার কোণা থেকে এক গম্ভীর আওয়াজ ভেসে এলো, “লোভ সর্বনাশ ডেকে আনে… যতটুকু তোমার, শুধু ততটুকুই নাও… না হলে সব হারাবে…”
রমেশের বুক ধড়ফড় করতে লাগল। কিন্তু সেই কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করে সে আরও মোহর সংগ্রহ করতে লাগল। তখনই গুহা কেঁপে উঠল, যেন প্রবল ভূমিকম্প হচ্ছে। ওপরে থেকে বিশাল বিশাল পাথর খসে পড়তে শুরু করল।
রমেশ আতঙ্কে মোহর ফেলে দিল এবং যত জোরে পারল দৌড় দিল। কোনোমতে গুহার বাইরে বেরিয়ে এলো সে। হাঁপাতে হাঁপাতে পিছনে তাকিয়ে দেখল, অন্ধকার গুহাটি একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেছে! যেন কোনোদিনই সেখানে কিছু ছিল না!
সেদিন রমেশ বুঝতে পারল, লোভ মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। তার হাতে তখন কেবলমাত্র সেই মোহরগুলোই ছিল, যা সে প্রথমে নিয়েছিল। সেই মোহর দিয়েই সে নিজের জীবন পাল্টে ফেলল, একটি নতুন কুঠার কিনল, পরিশ্রম করল, এবং ধীরে ধীরে তার জীবন ভালো হতে লাগল।
আজও, যখন গ্রামের লোকেরা রমেশকে সেই গুহার কথা জিজ্ঞাসা করে, সে মুচকি হেসে বলে, “ধন সীমিত সুখ দেয় কিন্তু তৃপ্তিই জীবনের প্রকৃত সম্পদ, আর লোভ সব সুখ কেড়ে নেয়”