কুনো ব্যাঙ আর গুপ্তধনের গল্প
বাংলাদেশের এক শান্ত গ্রামের গল্প এটা। গাঁয়ের পাশে ঘন বাঁশঝাড়, কচু গাছ আর সরু পায়ে হাঁটা পথ। বৃষ্টির পানি কচু পাতায় টলটল করে, যেন জলমুকুট!
এই কচু গাছের নিচে থাকত এক কুনো ব্যাঙ। সব সময় পেট ফুলিয়ে রাখত, চোখ কপালে তুলে বসে থাকত, একদম সতর্ক পাহারাদারের মতো।
এক ভোরবেলা, যখন পাখিরা উড়ছিল, কাকেরা ঝগড়া করছিল, আর চাষারা হাল নিয়ে মাঠে যাচ্ছিল,তখন সেই কুনি ব্যাঙকে দেখা গেল আগের চেয়ে বেশি উত্তেজিত। ঠিক তখনই এক বুড়ো মানুষ, যিনি ‘ঘাট’ থেকে ফিরছিলেন (মানে, প্রাতঃকৃত্য সেরে বাড়ি ফিরছিলেন), তিনি ব্যাঙের পাশ দিয়ে যেতে যেতেই দেখলেন, কুনো ব্যাঙটা হঠাৎ করে লাফ দিয়ে তার গা ঘেঁষে পড়ল!
বৃদ্ধ হেসে ফেললেন, ভাবলেন, “এ ব্যাঙ তো রেগে গেছে বুঝি!” কিন্তু এরপর যা ঘটল, তাতে তিনি চমকে গেলেন।
পথে যত লোক চলছিল, প্রত্যেকের গা ঘেঁষে কুনো ব্যাঙটা লাফাচ্ছিল। রাগে ক্ষোভে, ঠিক যেন পাহারাদার কেউ!
বৃদ্ধের মনে সন্দেহ হলো। তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেন। ভেবে দেখলেন, “না না, এই ব্যাঙ কিছু পাহারা দিচ্ছে। নিশ্চয় গুপ্তধন!”
তাই তিনি তার ছেলেদের ডেকে বললেন, “এই দ্যাখো! কচু গাছের নিচে গুপ্তধন আছে। কোদাল শাবল আনো, খুঁড়তে হবে!”
সবাই খুশি হয়ে ছুটে এল। মাটি খোঁড়া শুরু হলো। ব্যাঙটা ভয় পেয়ে দূরে লাফাতে লাগল।
এক কোপেই বের হলো একটা কানা পয়সা। ছেলেদের একজন সেটা হাতে তুলে নিল, আর তখনই ব্যাঙটা লাফিয়ে পড়ল তার হাতে! সে ভয় পেয়ে পয়সা আর ব্যাঙ দুটোই ফেলে দিল।
বৃদ্ধ এবার হো হো করে হেসে উঠলেন! বললেন, “এই তো! আমি ঠিকই বলেছিলাম। গুপ্তধন তো এটাই, এই পুরনো পয়সা! আর এই কুনো ব্যাঙ তার পাহারাদার।
তাই এত রাগ, এত চোখ কপালে! টাকার গরম তো!”
শিক্ষণীয় –
এই গল্পটা মজার হলেও শেখায় যে,প্রকৃতির ছোট্ট প্রাণীগুলোও তাদের মতো করে কিছু রক্ষা করে, যত্ন নেয়। আর গ্রামের মানুষদের সরল চোখে দেখা এইসব ঘটনা হয়ে ওঠে গল্প, বিশ্বাস আর আনন্দের উৎস।