Monday, June 30, 2025
Homeমজার গল্পমজার গল্প – তালেবে এলমের কাণ্ড

মজার গল্প – তালেবে এলমের কাণ্ড

মজার গল্প – তালেবে এলমের কাণ্ড

এক মৌলবী সাহেব আর তার তালেবে এলম। তখন এখনকার মত দেশের আনাচে-কানাচে এত মাদ্রাসা হয়নি। মহিলা মাদ্রাসার তো নামই শুনিনি। আমাদের সিংগাইর, চারিগ্রামে ও তার আশপাশে একটি মাত্র মাদ্রাসাই ছিল। সেই মাদ্রাসার হেড মওলানা নূরুল হক সাহেব ছিলেন প্রকৃত আলেম, ইসলামী শাস্ত্রে সুপণ্ডিত এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানেও ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন। আর আট-দশ মাইল দূরে নওয়াবগঞ্জ থানায় ছিলেন মওলানা এমারত হোসেন সাহেব। তিনি ঘোড়ায় চড়ে ওয়াজ করতে আসতেন। খুব ভাল বক্তা ছিলেন, ইংরেজিও জানতেন এবং মাঝে মাঝে বক্তৃতার মধ্যে তার লাগসই ব্যবহার করতেন। এঁরা বিদ্বান এবং সমাজকল্যাণকামী ছিলেন বলে আমরা তাদের খুব শ্রদ্ধা করতাম। মরহুম মওলানা নূরুল হক সাহেব সাহিত্য সংস্কৃতির বই খুব পড়তেন। আমরা তার কাছ থেকে ধর্ম ছাড়াও অন্য বিষয়েও বহুকিছু শিখেছি।

তো যা হোক, হঠাৎ কোত্থেকে যেন এক মৌলবী সাহেব এলেন এবং এক মসজিদে ইমামতি নিলেন। তিনি এমনিতে আলাভোলা ধরনের মানুষ ছিলেন। তবে খাবার ব্যাপারে তার বেশ লালচ ছিল। তাঁর তালেবে (ছাত্র) এলম ছিল এ ব্যাপারে আরও দড়। খাবার দেখলে অস্থির হয়ে যেত। খাবার দেখলে মৌলবী সাহেবকে বলত, হুজুর সুন্নতের কথাডা কন। ওই যে ক্ষুধা লাগলে আগে খেয়ে নিও। তারপর প্রসন্নচিত্তে নামাজ পড়ো। সেটাই সুন্নত।

তো বেশি খেলে যা হয়। হুজুর হয়ত মিলাদ পড়াচ্ছেন। তালেবে এলম উসখুস করছে। হুজুরতো তাঁর শিষ্যকে জানতেনই। তাই তার সঙ্গে অমন অবস্থা দেখলে নিজেদের তৈরি করা পরিভাষায় কথা বলতেন।

যেমন, কখনও ওয়াজ করার মধ্যেই ওই ঢংয়েই বলতেন : পুলিশ না চৈকিদার? বাইরে যাও কাজ সেরে ওজু করে আস এলেমদার।
গ্রামের সাধারণ লোক, ব্যাপার বুঝত। তারা একে ওয়াজের অংশ মনে করত। তো একদিন এক বাড়িতে খুব খাওয়ার পর দোয়া-খায়ের হচ্ছে। তালেবে এলম উসখুস থেকে মুচড়ামুচড়ি শুরু করল।

হুজুর বললেন : পুলিশে ধরেছে মনে হয়, এমুন কর কেন, বাইরে যাও, পাক-সাফ হয়ে ঘরে আস পুনরায়।

কবিতার মতো বলায় মানুষ খুব বুঝল না। হুজুর ভেবেছিলেন প্রস্রাবে ধরেছে। বাইরে যেয়ে কাজ সেরে ওজু করে আবার মজলিশে আসুক। তবে হুজুর পুলিশ শব্দ উচ্চারণ করায় তিন-চারজন মসজিদ থেকে উঠে দ্রুত চলে গেল। কিন্তু তালেবে এলম বাইরে গেল না-হাঁফাতে থাকল, কপাল ভরে গেল ঘামে। হুজুরের কবিতা করার স্বভাব ছিল। তাই আবার বললেন :
তাড়াতাড়ি বাইরে যাও,
খালাস হয়ে শান্তিমতো বস এসে,
এখন জোশের সময় এমন করে করিওনা রা-ও।

ওস্তাদের কবিতায় শিষ্যের মুখ খোলে না। মুখ-চোখ বিকৃত করে বলে : হুজুর, পুলিশ না, দারোগা। ওস্তাদ বোঝেন, উচ্চৈঃস্বরে কবিতার মতো করে বলেন : পুলিশ না?-দারোগা-এ যে বড় ঝামেলা।

মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন: আপনারা বাড়ি যান।
তীব্র ভৎসনায় শিষ্যের উদ্দেশ্যে বলেনঃ
ওয়াজ হইয়াছে শেষ—
তুমিও হাগিয়াছ বেশ—
পানি আন—তিনধোয়া দাও ভাল করে
থাকে না যেন এর কোন রেশ।

সব লোক চলে গেলে শেষে রেগে বলেন :
খাওন দেখলে হারামজাদা বেহুশ হইয়া যাও
নাও, এখন ঠেলা সামলাও!

ভবিষ্যতে যদি কোনদিন এমন কাণ্ড করবি—
বলে রাখি সাচ্চা কথা, আমার হাতে মরবি।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments