মজার গল্প – পণ্ডিতের বুদ্ধি
এক দেশে এক পণ্ডিত বাস করতেন। পণ্ডিতরা যেমন হন তিনিও ছিলেন তেমনি অর্থাৎ কিনা দিগগজ পণ্ডিত। তার পেটে বুদ্ধির অন্ত ছিল না। পেটের ভেতরে থরে থরে সাজানো সেই সব চমৎকার বুদ্ধি যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য তিনি নাক-কান-মুখ সব সময় বন্ধ করে রাখতেন। নাক-কানে তুলা বা অন্য কিছু দিয়ে ঢিপি মেরে রাখতেন তিনি। দমটা বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখে টিপি মারতেন না। হাতের দুটো আঙ্গুল সব সময় রাখতেন মুখের সামনে।
এমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল যে, ঘুমনোর সময়ও হাতের দুটো আঙ্গুল সদাসতর্ক পাহারাদারের মতো তার মুখের সামনে এমন এ্যাটেনশন অবস্থায় থাকতো যে একটা মাছি ও গোত্তা খেয়ে বাউলি মেরে পণ্ডিতের মুখগহ্বরে প্রবেশাধিকার পেতো না। যা হোক, নাক-কানে টিপি দিয়ে রাখার জন্য তার নাম হয়ে গিয়েছিল টিপেই পণ্ডিত। তো পেটভরা যার এতো বুদ্ধি গজ গজ করে তার চাহিদা তাই সমাজে ছিল খুব বেশি। যে কোন সমস্যায় পাড়া প্রতিবেশী আর গ্রামের মানুষ তো
আছেই, দূরদূরান্তের লোকজনও আসতো পণ্ডিতের বুদ্ধির জন্য।
তো, একদিন হয়েছি কি, এক বোকার বউ মাচার ওপরের মুড়ির মটকি থেকে মুড়ি বের করতে গিয়ে মটকির সামনের খুঁটির দুদিক থেকে দু’হাত দিয়ে মুড়ি তুলতে গিয়ে আর তুলতে পারছে না, হাতও বের হচ্ছে না। অনেক টানাটানি করলো বোকার বউ; জোরে, আস্তে, ধীরে এবং দ্রুত। কিন্তু ফলাফল একই। মুড়ি হাত থেকে মটকি বা মাচায় ফেলে দেয়া ছাড়া হাত বের করা যায় না। মহাসমস্যা। তাই মুশকিল আসানের জন্য ডাকা হল টিপেই পণ্ডিতকে।
পণ্ডিতপ্রবর এসে বললেন : আরে, বোকা আর বোকার বউই বোকা না, তোমরা যারা তামাশগীর হিসাবে এসেছ তারা আরো হদ্দ বোকা। তোমাদের চৌদ্দগোষ্ঠী রামবুদ্ধ বোকা। এই বিপদ থেকে উদ্ধারের একটা মাত্র পথই খোলা আছে। সবাই মিলে প্রথমে ঘরের চালটা ফেলে দাও। তার পর কপিকল আনো। আর বউকে বলো দু’হাতের মুঠোতে যে মুড়ি আছে তা শক্ত করে ধরে রাখতে। কোনোক্রমেই যেন দু’হাত বিচ্ছিন্ন না হয়। তারপর একটা শক্ত রশি বউয়ের গলায় বেঁধে কপিকলের সাহায্যে তাকে ওপরের দিকে টেনে তোল। তাহলেই বউকে মুক্ত করা যাবে। পণ্ডিতের কথা শিরোধার্য করে তাই করা হল। বউকে কপিকল দিয়ে টেনে বের করা হল ওপর দিয়ে। কিন্তু গলায় ফাঁস লেগে তার প্রাণবায়ু ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে।
বোকা বউয়ের আহাম্মক স্বামী বললোঃ হায় হায় পণ্ডিতের বুদ্ধিতে আমি এ কি সব্বোনাশ করলাম! আমার বোকাসুকা বউটা তো কতা কতিছে না। সে কি তাইলে মরি গেছে?
পণ্ডিত : আরে আহাম্মক, তোর সাতজন্মের পুণ্যে আমি এসেছিলাম! তাই না, বউয়ের তরতাজা শবটা পেলি। তা নাহলে অভাগিনী যে প্যাচে পড়েছিলো তাতে তো মরতোই, মাংস পচে দুর্গন্ধ ছড়াতো, বাড়িতে টিকতে পারতি না। শেষে খুঁটির সঙ্গে হাড় বাতাসে ঝনঝন করতো। আর রাতের বেলায় পেত্নী হয়ে তোর ঘাড় মটকাতো। সেইসব মহাঝাট থেকে তুইও বাচলি, বউটাও বাঁচলো। কেমন বুদ্ধিখানা দিয়ে সবদিক রক্ষা করে দিলাম।