Wednesday, June 18, 2025
Homeছোট গল্পমুশকিল আসান - মজার গল্প

মুশকিল আসান – মজার গল্প

মুশকিল আসান – মজার গল্প

এক গ্রামে তিন বন্ধু বাস করতো। তাদের একজনের ছিলো চোখের অসুখ। সে চোখে রোদ লাগলে বড়ো মুশকিলে পড়তো। রোদের তাপে সঙ্গে সঙ্গে চোখে চুলকানি শুরু হত। আর এক বন্ধুর ছিল কোমরে বিদঘুটে দাদ। তারও দাদের চুলকানি উঠলে সে অস্থির হয়ে উঠত। আর তিন নম্বর বন্ধুর ছিল মাথা ভরতি বিশাল টাক। রোদ লাগলে তার পাগল হবার উপক্রম হত। তো, এই তিন বন্ধু পৈলান খাঁ, কিম্মত মুন্সী আর জয়ধর গোসাই একদিন জ্যৈষ্ঠ মাসের কাঠফাটা রোদে দূরের এক হাটে যাবার জন্য খেয়াঘাটে এসে হাজির। তাদের উদ্দেশ্য খেয়া পার হয়ে হাটে যাবে।

খেয়ার মাঝি ছিলো রগড়ের ওস্তাদ। তার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি চাপলো। সে বললঃ দাদারা, আপনেদের স্বভাব তো আমি জানি পৈলান দাদার চোখের অসুখ। নৌকায় ওঠেই শুরু করবেন চোখ কচলানি। এতে খেয়ার অন্য লোকের চোখের ব্যামো হতে পারে। তাই চোখ কচলাবেন না এই শর্তে পার করতে পারি। আর কিম্মত মুন্সী সাবের যে বাঘা দাইদ তার চুলকানি শুরু অইলে শরীলের দুলুনি-ঝাকুনিতে আমার গুদারা নাও ডুইবাই যাইব। গোসাইদার তেল চকচইক্কা মাথাখানও রোইদে তাওয়া গরমের অবস্থা—কখন আগুন ধইয়া যায় তার ঠিক আছে। এই অবস্থায় পার করবার পারি, তয় শর্ত অইল— পৈলান দাদা নৌকায় বইসা চোখ কচলাইতে পারব না, কিম্মত ভাই দাইদে আঙ্গুল লাগাইতে পারত না আর জয়ধর দা টাক ঢাকতে পারত না। তিন বন্ধুর হাটে যাওয়া জরুরি। তাই শর্ত মেনে খেয়া নৌকায় ওঠে বসলো।

মাঝ নদীতে যেয়ে তিনজনই নিজ নিজ উপসর্গে আকুলি বিকুলি শুরু করল।

পৈলান খান বলেঃ আমার মামুগো বাড়ির একটা গল্প কই, তোমরা শুইন্যা তাজ্জব অইবা।

নৌকার সকলে কয়ঃ কও, কও গল্পটা, কও।

পৈলান খান বলেঃ আমার মামুগো একটা বলদ আছিলো। হায়রে, তার শিংয়ের বাহার! (দুহাত দিয়ে দেখিয়ে) এই মাথার দুইপাশ থাইক্যা উইঠ্যা নিচের দিকে নাইমা বেকা অইয়া পরায় (প্রায়) দুই চোখে ঢুইক্যা যাওনের অবস্থা। আহারে বোবা জাত—কইবারও পারে না, সইবারও পার না। ‘উচপিচ’ (অস্বস্তি) লাগে তাই ফালও (লাফ) দেয়। তখন আমার মামু দুই হাত দিয়া বলদড়ার (বলদটার) দুই চোখ এমনে (নিজের চোক কচলে) কচলে দিত। তখন গরুড়া শান্ত আইত।

দ্বিতীয় বন্ধু কিস্মত মুন্সী মহাধূর্ত। সে পৈলানের কৌশল দেখে করণীয় ঠিক করে ফেলে।

সে বললঃ ইবার (এইবার) আমার গল্পটা কই। আমাগো একটা গরু আছিল। প্রতিদিন গরু ঝাপানোর (গোসল) জন্য নিবার সময় হে গরু বান্ধনের খাম্বার লগে শরীর ঘইষা লইত—এমনে কইরা (নিজের হাতে বাঁকানো তিনমুখা লাঠিতে দাদের অংশ ঘষে)। ফলে তারও দাদের চুলকানি মরল।

এবার মুখে ঝকমকা হাসি নিয়ে জয়ধর গোসাই বলেঃ মাঝি, তুই না কইছিলি আমার চকচক্কা টাক রোইদে তাওয়ার মত গরম অইয়া আগুন ধইরা যাইতে পারে। বড়ই হাচা (সত্য) কতা (কথা) কইছছরে মইন্যা। আর দেরি করলে আগুন ধইরা সব্বোনাশ অইয়া যাইব। তর নাও-ও যাইব পুইড়া ছাই অইয়া।

এই বলে সে নদী থেকে ঠাণ্ডা পানি দুহাতে তুলে টাক ভিজাতে থাকে।

তাদের বুদ্ধি দেখে খেয়ার মানুষ চমৎকৃত হয়—মুচকে মুচকে হেসে কেউ কেউ বলে, ত্রিরত্নদের ঠকানো কি এতই সহজ!

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments