নন্দলালের হাসির গল্প – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
গল্প – ১
একদিন নন্দলাল ভাবল, সে আত্মহত্যা করবে। তাই সে কিছু খাবারদাবার আর একটা পানির বোতল নিয়ে ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করার জন্য রেললাইনের ওপর বসে আছে। খাবারদাবারও শেষ, কিন্তু ট্রেন আর আসে না। এমন সময় এক লোক এসে নন্দলালকে প্রশ্ন করল, ‘এত ব্যাগ নিয়ে এই রেললাইনের ওপর বসে করছেনটা কী, বলুন তো মশাই?’
নন্দলাল বলল, ‘মশাই, দেখুন তো কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি, কিন্তু ট্রেন আসার কোনো নিশানা নেই! ট্রেনে মরার বদলে শেষে না আবার খিদের জ্বালায়ই মরে যাই!’
গল্প – ২
একদিন নন্দলাল তার গাড়িটি ঠেলেঠুলে রাস্তা থেকে নিচে নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে একটা সাইনবোর্ডে ইংরেজিতে লেখা, ‘নন্দলাল ইজ জাস্ট স্ট্যান্ডিং দেয়ার।’
ঠিক ওই পথ ধরেই যাচ্ছিল হীরালাল। নন্দলালের এ অবস্থা দেখে তো হীরালাল অবাক। হীরালাল নন্দলালকে জিজ্ঞেস করল, ‘রাস্তা থেকে নেমে তুমি কী করছ এখানে?’
নন্দলাল বলল, ‘এবার আমি নোবেল পুরস্কার জেতার চেষ্টা করছি। তুমি বিরক্ত কোরো না তো! যাও এখন।’
হীরালাল বলল, ‘কিন্তু সেটা কীভাবে? তুমি তো দেখছি এক সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছ।’
নন্দলাল বলল, ‘বোকার মতো কথা বলো কেন। তুমি জানো না যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে আউটস্ট্যান্ডিং, তারাই কেবল নোবেল পায়। তাই তো আমি আউটস্ট্যান্ডিং হয়েই দাঁড়িয়ে আছি। এই যাহ্, তোমাকে বুদ্ধিটা দিয়ে তো ভুলই করে ফেললাম মনে হয়।’
গল্প – ৩
একদিন নন্দলাল মাঠের মধ্যে কিছু লোকের অদ্ভুত দৌড় দেখে নিজেও তাদের পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল এবং একজনকে বলল, ‘আরে মশাই, আপনারা এ রকম আঁকাবাঁকা করে দৌড়াচ্ছেন কেন?’
দৌড়াতে দৌড়াতেই একজন প্রতিযোগী বললেন, ‘এটা হচ্ছে গিয়ে ম্যারাথন দৌড়। জিতলে একজনকে পুরস্কার দেওয়া হবে। তাই এভাবে দৌড়াচ্ছি।’
এবার নন্দলাল একটু ভেবে বলল, ‘কেবল একজনকে পুরস্কার দেওয়া হবে! তবে পেছনে এতগুলো লোক বোকার মতো দৌড়াচ্ছে কেন?’
গল্প – ৪
একদিন নন্দলাল বিলের ধারে বসে আছে। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নন্দলালকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই, এই বিলের গভীরতা কেমন হবে, বলতে পারেন?’
নন্দলাল একবাক্যেই বলে দিল, ‘হবে হয়তো এক ফুটের কাছাকাছি!’
এ কথা শুনে লোকটি তো তাজ্জব বনে গেল। সে আবারও নন্দলালকে জিজ্ঞেস করল, ‘মশাই, আপনি এত নিশ্চিত হলেন কী করে যে এই বিলের গভীরতা মাত্র এক ফুট? আপনি কি কখনো এই বিলে নেমেছিলেন?’
নন্দলাল বলল, ‘না, আমি কখনো এ বিলে নামিনি। তবে একটু আগে একটা হাঁসকে নামতে দেখেছি। কিন্তু হাঁসটার শুধু পা দুটোই জলে ডুবে ছিল। গভীরতা বেশি হলে তো পুরো হাঁসেরই ডুবে যাওয়ার কথা ছিল, তাই না!’
গল্প – ৫
একদিন নন্দলাল এক ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গেল। একটু পর হুট করেই বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি দেখে ডাক্তার বললেন, ‘নন্দলাল, তোমার তো ছাতা নেই আর বাইরেও খুব বৃষ্টি, তুমি বরং আজকের রাতটা আমার বাসায়ই থেকে যাও।’
নন্দলাল তো এক কথায় রাজি হয়ে গেল। ভেতর থেকে ডাক্তার রাতের খাবারের জন্য নন্দলালকে ডাকতে এসে দেখলেন, সে নেই। ডাক্তার মহা চিন্তায় পড়লেন। একটু পর নন্দলাল গায়ের কাপড় ভেজা অবস্থায় হাতে একটা রাতের পোশাক নিয়ে ডাক্তারের সামনে হাজির হলো।
ডাক্তার নন্দলালকে দেখে রাগত স্বরে বললেন, ‘আমাকে না জানিয়ে এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি তো মহা চিন্তায় পড়েছিলাম।’
নন্দলাল বলল, ‘আমি যে বৃষ্টির কারণে আজকের রাতটা তোমার বাসায় থাকব, সে কথাটি আমার বাসায় বলতে গিয়েছিলাম। আর সেই সঙ্গে রাতের পোশাকটাও নিয়ে এলাম।’