Wednesday, June 18, 2025
Homeকিশোর গল্পমজার গল্প – পান্তা বুড়ী

মজার গল্প – পান্তা বুড়ী

মজার গল্প – পান্তা বুড়ী

এক গ্রামে থাকত এক বুড়ী। লোকে তাকে বলত পান্তা বুড়ী, কারণ সে রোজ হাঁড়ি ভরে ভাত রাঁধে, অর্ধেক খায়, আর বাকি ভাতে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে রেখে দেয়, পান্তা বানায়। সকালে উঠে সেই পান্তা, কাঁচা লঙ্কা আর পিঁয়াজ দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়, আর তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।

কিন্তু এক চোর ঠিক তার পান্তার গন্ধ পেয়ে রোজ রাতে চুপি চুপি এসে হাঁড়ির ভাত খেয়ে যায়। পান্তা বুড়ী সকালে উঠে দেখে হাঁড়ি ফাঁকা। তখন সে গলা ছেড়ে চিৎকার করে, “হ্যাঁরে, কোন হারামজাদা চোর রোজ আমার পান্তাভাত চুরি করে খায়?” চোর লুকিয়ে শুনে মনে মনে হাসে।

এভাবে অনেক দিন চলল। বুড়ীর সহ্যশক্তির বাঁধ ভাঙল। সে বলল, “এবার আমি রাজার কাছে নালিশ করব। চোরের বিচার চাই।”

পান্তা বুড়ী রাগে গজগজ করতে করতে রাজার বাড়ির পথে হাঁটল। হঠাৎ দেখে রাস্তায় এক শিং মাছ ছটফট করছে।

মাছটা বলল, বুড়ীমা, আমায় পুকুরে ফেলে দাও না, না হলে আমি শুকিয়ে মরে যাবো।

বুড়ী বলল, আহারে, এই গরমে কষ্টে পড়েছিস বাছা। চল, তোকে ফেলে দিই পুকুরে। বুড়ী মাছটাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে আবার হাঁটা ধরল।

আরও কিছুদূর গিয়ে দেখে এক ছুরি পড়ে আছে রাস্তায়।

ছুরিখানা বলল, বুড়ীমা, আমি এখানেই পড়ে থাকলে কেউ পা দিয়ে কেটে যাবে। আমায় ওই ঝোপে লুকিয়ে দাও না।

বুড়ী ছুরিটা তুলে নিয়ে ঝোপে ফেলে দিয়ে চলল।

পথে আরও একটু গেলে এক গাই লতায় জড়িয়ে আটকে আছে।

গাইটি মিনতি করে বলল, বুড়ীমা, একটু সাহায্য করো, এই লতা-পাতায় জড়িয়ে আমি নড়তে পারি না।

বুড়ী দুই হাতে লতা ছিঁড়ে গাইকে মুক্ত করে দিল। গাইটা খুশি হয়ে ঘাস খেতে লাগল।

আরও সামনে গিয়ে দেখে এক বেলগাছ শুকিয়ে গেছে। গাছটা কেঁদে বলল, আমার চারপাশে আগাছা জন্মেছে, মাটির রস সব খেয়ে নিচ্ছে। আমি শুকিয়ে যাচ্ছি বুড়ীমা।

বুড়ী গাছের চারপাশ থেকে আগাছা উপড়ে দিয়ে বলল, এই নে বাছা, নিঃশ্বাস নে ঠিকমত।

সবাইকে সাহায্য করে বুড়ী পৌঁছাল রাজার দরবারে। তখন সভা প্রায় শেষের পথে।

বুড়ী রাজাকে বলল, “হুজুর, এক চোর রোজ রাতে আমার পান্তাভাত চুরি করে খায়, এর বিচার চাই।”

রাজা বললেন, তুমি যদি চোরকে ধরে আনো, তাহলে বিচার করব। আমি তো জানি না কে চোর।

পান্তা বুড়ী রাগে ফুসে উঠল, তোমার পাহারাদার কী ঘুমায়? রাজ্য চলতেছে কেমনে, চোর আসে, পান্তা খায়, তুমি বলো ‘ধরে আনো’।

রাগে দুঃখে বুড়ী মাথা ঝাঁকিয়ে ফিরে চলল।

ফেরার পথে আগের সবাই আবার দেখা দিল।

বেলগাছ বলল, একটা পাকা বেল নিয়ে যাও। চুলায় পুড়িয়ে রেখে দিও, কিছু হবে।

গাই বলল, একনাদা গোবর নিয়ে যাও, দরজার সামনে রাখো।

ছুরি বলল, আমাকে সেই গোবরের ভিতরে লুকিয়ে রাখো।

শিং মাছ বলল, আমাকে সেই পান্তাভাতের হাঁড়িতে রেখে দিও।

বুড়ী বলল, বাহ! এবার দেখি চোর কেমন খায় পান্তা।

সন্ধ্যায় বুড়ী হাঁড়ি ভরে ভাত রাঁধল, অর্ধেক খেল, বাকিটা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পান্তা বানাল। তারপর শিং মাছটাকে সেই হাঁড়িতে রাখল। দরজার কাছে একনাদা গোবর, তার ভিতর ছুরি, আর চুলায় বেলটা পুড়িয়ে একটা মোটা কাপড়ে জড়িয়ে রেখে দিল।

পান্তা বুড়ী চুপিচুপি ঘুমিয়ে পড়ল। রাত বাড়তেই চোর এল। ধীরে ধীরে হাঁড়ির ঢাকনা তুলল।

ঝটাস, শিং মাছ তার আঙুলে কাঁটা ফুটিয়ে দিল।

চোর লাফ দিয়ে পেছনে পালাতে গিয়ে গোবরের উপর পড়ে গেল। ছুরির উপর গিয়ে পা কেটে গেল। ব্যথা, দুর্গন্ধে চোখ মুখে গোবর লেগে অস্থির।

ভেবে নিল, একটু গরম করে পা হাত সেঁকাই, গেল বেলগাছের পুড়তে থাকা আগুনের কাছে।

যেই বেলের গায়ে হাত দিল, বেল ফেটে চোরের গায়ে পড়ল। চোর ছ্যাঁকা খেয়ে চিৎকার করে দৌড় লাগাল।

বুড়ী চিৎকার শুনে উঠে বলল, “কে রে! কে রে ও?”

কিন্তু ততক্ষণে চোর অনেক দূরে, গোবর মাখা মুখে, কাটা পা নিয়ে, বেল ফাটা চেহারায় গোঁ গোঁ করে পালাচ্ছে।

সেই রাতের পর থেকে চোর আর ওই পাড়া-মহল্লার ধারেও যায় না।

পান্তা বুড়ী? সে রোজ খায় তার প্রিয় পান্তাভাত, আর বসে বসে ছেঁড়া কাঁথা সেলাই করে, হাসতে হাসতে বলে, “চোরে করে চুরি,আর আমি ধরি চোর।”

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments