Thursday, July 24, 2025
Homeইসলামিক গল্পপ্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে ধাবিত হয়

প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে ধাবিত হয়

প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে ধাবিত হয়

হযরত হাশিম (রহ.) ছিলেন বিখ্যাত আলেম। এইটা তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি শিক্ষামূলক ঘটনা। হাশিম (রহ.) বলেন, একবার আমি একা একা সফর করছিলাম। আমার কোনো সঙ্গি ছিল না।

পথিমধ্যে ভীষণ ক্ষিদে পেল। খাবার যা নিয়ে এসেছিলাম, আগেই তা শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মরূভূমিতে একটি তাঁবু নজরে পড়ল। আমি সওয়ারি থেকে নামলাম। তাঁবুর ভিতরে একটি মহিলা বসা ছিল।

আমি তাকে বললাম বোন! আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত। আমাকে কিছু খেতে দিবে? সে রেগে গিয়ে বলল, আমি কি এখানে মুসাফিরদের জন্য খাবার রান্না করে বসে আছি নাকি? যান, নিজের রাস্তা দেখুন। খাবার-টাবারের কোনো ব্যবস্থা এখানে হবে না।

মহিলার কথায় মনে খুব আঘাত পেলাম। আমি তখন এতটা ক্ষুধার্ত ছিলাম যে, ওঠে দাঁড়াতেও পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে সেখানেই কিছুক্ষণ বসে রইলাম।

খানিক বাদে মহিলার স্বামী এল। আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলল- সালাম, স্বাগতম, কে আপনি? আপনার আগমন শুভ হোক।

বললাম, আমি একজন মুসাফির

– খানা খেয়েছেন?
– না, খাইনি।
– কেন খাননি?
– চেয়েছিলাম। পাইনি।

এরপর সে স্ত্রীকে ডেকে বলল এ কেমন কথা যে, খানা চাওয়া সত্ত্বেও তুমি মুসাফিরকে খানা দাওনি?

– না, দেইনি। কীভাবে দেব আমি? আমি কি মুসাফিরের জন্য খাবার প্রস্তুত করে বসে আছি? ওদেরকে খানা খাইয়ে খাইয়ে আমার ঘর কি উজাড় করে দিব? বলে সে রেগেমেগে অন্যপাশে চলে গেল।

মহিলার স্বামী ছিল সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। তাই স্ত্রীর কথায় সে রাগ করল না, বরং শুধু বলল, তুমি তোমার ঘর খাবার দিয়ে বোঝাই করে রাখো। আল্লাহ পাক তোমাকে হেদায়েত দান করুন। তারপর সে নিজে গিয়ে একটি বকরি জবাই করে নিজেই রান্না করে আমাকে খাওয়াল এবং স্ত্রীর এই অযাচিত আচরণের জন্য খুব দুঃখ প্রকাশ করল।

খানাপিনা শেষ করে আমি পথ চলতে লাগলাম। এক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর একসময় আবার আমার ক্ষিদে পেল। এবং আশ্চর্য! সেখানেও আগের মত একটি তাঁবু নজরে পড়ল এবং সেই তাঁবুর নিকট এক মহিলাকে দেখা গেল। আমি মহিলার কাছে গিয়ে বললা, বোন!আমি একজন মুসাফির। খুবই ক্ষুধার্ত। আমাকে কিছু খেতে দিবে?

মহিলা বলল, স্বাগতম! আপনার আগমন শুভ হোক। আমার ঘরে আজ আল্লাহর রহমত এসেছে। আল্লাহর বরকত এসেছে। এ বলে সে একটি বকরি জবাই করে রান্না করল। তারপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে যখন আমার সামনে খাবার পেশ করল। এমন সময় তার স্বামী এসে উপস্থিত হলো।

-আমাকে জিজ্ঞেস করল–
– তুমি কে?
– বললাম, মুসাফির।
– খাবার কে দিয়েছে?
– আপনার স্ত্রী।

এ কথা শুনেই সে তার স্ত্রীর উপর চড়াও হলো এবং চিৎকার করে বলল, তোমার কি বুদ্ধি হয় না? তুমি কি এভাবে মেহমানদারী করে আমার ঘর খালি করে দিবে? আমাকে পথের ভিখারী বানিয়ে ছাড়বে?

লোকটির কথা শুনে আমার দারুন হাসি পেল। আমি কিছুতেই হাসিকে সংবরণ করতে না পেরে হো হো করে হেসে উঠলাম।আমার হাসি দেখে লোকটি আরো রেগে গেল। জিজ্ঞেস করল, হাসছ কেন?

আমি বললাম এখানে আমি যে দৃশ্য দেখলাম, এক মনজিল আগের এক জায়গায় এক তাঁবুতে এর উল্টো দৃশ্য দেখে এসেছি।

মানে?

এখানে দেখছি, আমাকে খাবার দেয়ার কারণে স্বামী তার স্ত্রীর উপর রাগ করছে, আর ওখানে দেখে এলাম, স্ত্রী তার স্বামীর উপর রাগ করছে।

কি বিচিত্র মানুষের মন! কত পার্থক্য মানুষের আচরণে? লোকটি বলল, জানো, সেই তাবুর মহিলাটি কে? যে তার স্বামীর উপর রাগ করেছিল?

আমি বললাম, না।

সে বলল, ঐ মহিলা ছিল আমার বোন। আর এ মহিলা হলো, ঐ পুরুষের বোন যিনি আপনাকে নিজ হস্তে বকরি জবাই করে রান্না করে খাইয়েছিলেন।

আমি বুঝতে পারলাম, প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে ধাবিত হয় বা তার বংশের বৈশিষ্টবহন করে। তবে মানুষ চেষ্টা করলে আল্লাহ তাকে সৎপথে রাখেন। সামর্থ্য দান করেন।

GolpoKotha
GolpoKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments