Thursday, June 19, 2025
Homeমজার গল্পমজার গল্প – পুতা নিয়া যাও

মজার গল্প – পুতা নিয়া যাও

মজার গল্প – পুতা নিয়া যাও

হাটের দিন, সকাল সকাল হাটে প্রচুর মাছ উঠছে। হাটের ঠিক মাঝখানে এক মাছওলার দোকানে বিশাল এক বোয়াল মাছ উঠেছে। লোকে হুমড়ি খেয়ে দেখছে। এমন সময় এক ফকির মুসাফির লোক ওদিকে তাকিয়ে দাঁড়াইছে। তার গায়ে জীর্ণ চাদর, হাতে একটা লাঠি, কাঁধে একখান বোচকা। সে মন দিয়ে বোয়াল মাছটার পেটির দিকে চেয়ে আছে।

মনে মনে ভাবতেছে, “আহারে, যদি এই মাছটার পেটি দিয়ে চারটি ভাত খেতে পারতাম। কত্তদিন হলো মাছ-মাংসের দেখা নেই।”

এই রকম দাঁড়াইয়া থাকতে থাকতেই এক চাষা এল। সে এসে মাছটা কিনে ফেলল। মুসাফিরের তখন মনে হইল, এই লোকটার পেছনে পেছনে গেলে হয়তো কিছু পাওয়া যাবে। তাই সে চাষার পেছনে পেছনে হাঁটা ধরল।

চাষা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে, মুসাফির তার কাছে গিয়া কইল, “সাহেব, আমি এক ভিক্ষুক মানুষ। দিন আনি দিন খাই। হাটে আজকে যে বড় বোয়াল মাছ কিনলেন, আমি ঐ মাছটার পেটি দেখে বড় লোভে পড়েছিলাম। ভাবলাম, যদি আপনার সহানুভূতি হয়, মাছটার পেটি যদি একটু খেতে পাই, তাহলে বড়ই খুশি হব।”

চাষা খুবই দয়ালু মানুষ। সে হেসে বলল, “আরে এই আর কি। তুমি চল, আমার বাড়িতে খাওয়াব তোমারে।”

তারপর মুসাফিররে বৈঠকখানায় বসিয়ে, মাছটা ভিতরে তার বউয়ের হাতে দিয়ে বলল, “মাছটার পেটিখানা মোটা করে কাটবা, আর ওইটা মুসাফিরকে দিয়া দিবা। লোকটা অভুক্ত মানুষ, পেট ভরে খাওয়াই দিবা।”

এই কথা কইয়া চাষা বাহিরে গেল। এমন সময় তার একটা গরু ছুটে গেল। চাষা আর কি, গরুর পেছনে দৌড় দিল।

এই ফাঁকে ভিতরে চাষার বউ মাছ কাটতেছে। সে মনে মনে ভাবতেছে, বাড়িতে ভালো কিছু থাকলেই নিয়া আসে মুসাফির-ভিক্ষুক। মুরগির রান, মাছের পেটি সব দিয়া দেয়। এখন আবার এই বড় বোয়ালের পেটিটাও মুসাফিররে দেবে। হুঁ, আমি কি চুপচাপ থাকি?

এই কথা ভাবতে ভাবতে একটা বুদ্ধি মাথায় এল। সে একটা মোটা পুতা (শিল-পাটায় বাটা বাটন পুতা) তুলে পাটার উপরে রাখল আর ঘষতে লাগল। মুখে ভাঙা গলায় সুর করে কান্নাও শুরু করল, “হায় হায়, কি বিপদ। হায় আমার কপাল।”

বাইরে বসে থাকা মুসাফির শুনতে পায় এই কান্নার আওয়াজ। কিছুক্ষণ সহ্য করে, শেষে আর থাকতে না পেরে ভিতরে ঢুকে গিয়ে বলে, “মা গো, কি হইছে তোমার? তুমি কাঁদতেছ ক্যান?”

চাষার বউ মুখে আঁচল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “না বাবা, এই কথা তোমারে কইতে পারুম না। স্বামী নিষেধ করছে।”

মুসাফির বলে, “না মা, আমি তো তোমার পায়ের ধুলি। কিছু লুকাইও না।”

তখন বউ নাকি কইল, “বাবা গো, আমার স্বামী যাওয়ার সময় বলছে, ‘এই মুসাফির বড়ই লোভী। আমাদের পুতাখানা পাটায় ধার দিয়ে চোখা করে রাখ। মুসাফিরের গলার ভিতর দিয়ে ঢুকাইয়া দিব। যাহাতে সে আর কাহারও মাছ দেখে লোভ করতে না পারে।’ এখন তুমি কও, আমি কি করুম, স্বামীর আদেশ তো পালন করতেই হবে। এই জন্যে কাঁদতেছি।”

এই কথা শুনেই মুসাফিরের গায়ে হিম। সে তো রীতিমতো কাঁপতেছে। বলে, “মা গো, আমি কিছুই খাইতে চাই না। তুমি আস্তে আস্তে পুতা ঘষ, আমি এখনই চলি।”

এই কইয়া তড়াক করে বাইর হয়ে দৌড় দিল। পেছনে না তাকায়ে হন হন করে চলল।

এদিকে চাষা গরু ধরেই ফিরছে। বাড়ি এসে দেখে মুসাফির নাই! স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করল, “মুসাফির গেল কই?”

বউ বলে, “ওগো, তুমি যাওয়ার পর মুসাফির বলে, ‘তোমাদের পুতা দাও।’ এখন একখান মাত্র পুতা আমাদের, ওরে কেমনে দিই। তাই দিতে চাই নাই, রেগে গিয়া চলে গেছে।”

চাষা তখন কইল, “আরে বোকা, একখান পুতার কি এমন দাম। দিয়া দিলেই পারতি। আমি আবার হাট থিকা আরেকটা কিনে আনতাম। দে পুতাটা, আমি নিজেই গিয়া ওরে দিই।”

এই কইয়া চাষা হাতে পুতা নিয়া দৌড় দিল। গিয়ে দেখে, মুসাফির অনেক দূরে। চাষা চিৎকার করে কইতেছে, “ও মুসাফির। দাঁড়াও রে। পুতা নিয়া যাও। পুতা নিয়া যাও।”

মুসাফির পেছনে তাকিয়ে দেখে চাষা পুতা হাতে নিয়ে দৌড়ায়ে আসতেছে। সে তো আরও জোরে দৌড় দিল। বোচকা-বুচকি হাতে ফেলে শুধু জান বাঁচাইতে ছুটে চলল।

চাষা যত বলে, “ও মুসাফির! পুতা নিয়া যাও রে!” মুসাফির তত দৌড়ায়, “বাঁচাও! বাঁচাও! গলায় পুতা ঢুকায়া দিব!”

(সমাপ্ত)

আরো মজার মজার গল্প পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments