Wednesday, June 18, 2025
Homeকিশোর গল্পকচ্ছপ ও খরগোশের গল্প

কচ্ছপ ও খরগোশের গল্প

কচ্ছপ ও খরগোশের গল্প

অনেক দিন আগের কথা। এক জঙ্গলে বাস করতো বিভিন্ন রকমের প্রাণী, হরিণ, বানর, হাতি, সিংহ, খরগোশ আর কচ্ছপ। এদের মধ্যে খরগোশ ছিলো খুবই চালাক ও তেজী, আর কচ্ছপ ছিলো ধীর-স্থির ও শান্ত প্রকৃতির।

খরগোশ তার গতির জন্য খুবই গর্বিত ছিল। সে প্রায়ই অন্যান্য প্রাণীদের বলতো, “আমার মতো দ্রুত কেউ দৌড়াতে পারে না। আমি চাইলে ঝড়ের গতিতে ছুটতে পারি!”
সবাই জানতো সে সত্যিই খুব দ্রুত। কিন্তু তার এই অহংকারটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছিল।

একদিন খরগোশ পানির ধারে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল। হঠাৎ সে বলে উঠলো, “এই জঙ্গলে আমিই সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রাণী। কেউ চাইলেও আমাকে হারাতে পারবে না।”

এটা শুনে কচ্ছপ শান্ত গলায় বললো, “তুমি হয়তো দ্রুত দৌড়াতে পারো, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে ধৈর্য আর নিরবিচারে অগ্রসর হওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

খরগোশ হেসে উঠলো, “তুই বলছিস? তুই? তুই এত ধীর যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে অর্ধেক দিন লাগে!”

কচ্ছপ গম্ভীরভাবে বললো, “তা হতে পারে, কিন্তু আমি প্রতিযোগিতা করলে আমি হেরে যাব, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।”
খরগোশ হেসে ফেলে বললো, “তাহলে চল! আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি। দেখা যাক কে আগে গন্তব্যে পৌঁছায়।”

কচ্ছপ সম্মতি জানালো। জঙ্গলের অন্যান্য প্রাণীরা উল্লাসে মেতে উঠলো। তারা ভাবলো, এ এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা হবে! সবাই জড়ো হলো সেই প্রতিযোগিতা দেখার জন্য।

দৌড়ের রুট নির্ধারণ করা হলো। বন থেকে শুরু হয়ে একটা বড় গাছের গোড়া পর্যন্ত, যেখানে একটা বড় পাথর আছে। যেই আগে সেই পাথরে পৌঁছাবে, সেই বিজয়ী।

পরদিন সকাল। সূর্য উঠেছে, পাখিরা কিচিরমিচির করছে। প্রতিযোগিতার দিন। সব প্রাণী জড়ো হয়েছে দৌড় দেখার জন্য। সবাই উৎসুক, কি হয়, দেখা যাক!

একটা কাঠবিড়ালি ছিল বিচারক। সে তার লেজ দিয়ে সংকেত দেবে শুরুতে। সবার দৃষ্টি তখন খরগোশ ও কচ্ছপের দিকে।
কাঠবিড়ালি সিগন্যাল দিলো, “এক, দুই, তিন… দৌড়!”

খরগোশ যেন বিদ্যুতের মতো ছুটলো। মুহূর্তের মধ্যেই সে কচ্ছপকে পিছনে ফেলে অনেকদূর চলে গেলো। সে পথেই ভাবলো, “এই কচ্ছপ তো এখনও শুরুই করেনি ভালোভাবে! আমি তো অনেক এগিয়ে আছি। একটু বিশ্রাম নিই।”

পথের পাশে একটা গাছের ছায়ায় সে বসে পড়লো। ঠাণ্ডা বাতাসে চোখে ঘুম চলে এলো। সে ভেবেছিল, “কিছুক্ষণ ঘুমাই। কচ্ছপ তো আর পৌঁছাতে পারবে না!” এবং সে ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে কচ্ছপ খুব ধীরে ধীরে কিন্তু স্থিরভাবে এগিয়ে চললো। তার চোখে ছিল দৃঢ়তা, মনে ছিল লক্ষ্য। সে জানতো, তার গতি কম, কিন্তু সে থামবে না।

জঙ্গলের অন্যান্য প্রাণীরা অবাক হয়ে দেখলো, কচ্ছপ থেমে নেই। সে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে। কেউ কেউ হাসছিল, কেউ আবার বলছিল, “দেখো, কি অদম্য মনোভাব! যদি কোনো অলৌকিক কিছু ঘটে যায়!”

ঘণ্টাখানেক পর খরগোশ ঘুম ভেঙে উঠে। সে চমকে উঠে দেখে, সূর্য অনেক ওপরে উঠেছে। সে তাড়াতাড়ি উঠে দৌড়াতে শুরু করলো। কিন্তু…

সে গন্তব্যে পৌঁছে দেখে, কচ্ছপ অনেক আগেই পাথরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে ধীরে কিন্তু নিরবিচারে এসে পৌঁছেছে, এবং সে বিজয়ী হয়েছে!

সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। খরগোশ থেমে গেলো। সে লজ্জিত। সবাই আনন্দে চিৎকার করলো, “বিজয়ী! বিজয়ী কচ্ছপ!”

খরগোশ মাথা নিচু করে কচ্ছপের সামনে এলো। কচ্ছপ বিনয়ের সঙ্গে বললো, “তুমি অনেক দ্রুত, কিন্তু তুমি নিজেকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিলে। আমি জানতাম, আমি যদি থেমে না যাই, আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাবই।”

খরগোশ দুঃখ প্রকাশ করলো, “তুমি ঠিক বলেছো। আমি অহংকার করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম গতি মানেই সব। কিন্তু ধৈর্য, মনোযোগ আর একাগ্রতা যে আরও গুরুত্বপূর্ণ, তা তুমি শিখিয়ে দিলে।”

তখন থেকে খরগোশ আর অহংকার করেনি। সে কচ্ছপকে শ্রদ্ধা করতে শিখলো। আর কচ্ছপ? সে জঙ্গলের সব প্রাণীর কাছে হয়ে উঠলো এক অনুপ্রেরণা

গল্পের শিক্ষা: ধৈর্য এবং স্থিরতা দিয়ে অনেক কঠিন লক্ষ্যও অর্জন করা যায়

(সমাপ্ত)

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments