Thursday, July 24, 2025
Homeকিশোর গল্পসাক্ষী শিয়াল – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

সাক্ষী শিয়াল – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

সাক্ষী শিয়াল – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

একজন সওদাগর একটি ঘোড়া নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিল। যেতে যেতে তার বড্ড ঘুম পেল। তখন সে ঘোড়াটিকে এক গাছে বেঁধে, সে গাছের তলায় ঘুমিয়ে রইল।

এমন সময় এক চোর এসে সওদাগরের ঘোড়াটিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

সওদাগর ঘোড়ার পায়ের শব্দে জেগে উঠে বললে, ‘কি ভাই, তুমি আমার ঘোড়াটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’

চোর তাতে ভারী রাগ করে বললে, ‘তোমার ঘোড়া আবার কোনটা হল?’

শুনে সওদাগর আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘সেকি কথা! তুমি আমার ঘোড়া নিয়ে চলে যাচ্ছ, আবার বলছ কোন্‌টা আমার ঘোড়া?’

দুষ্টু চোর তখন মুখ ভার করে বললে, ‘খবরদার তুমি আমার ঘোড়াকে তোমার ঘোড়া বলবে না!’

সওদাগর বললে, ‘কি? আমি আমার ঘর থেকে ঘোড়াটাকে নিয়ে এলুম, আর তুমি বলছ সেটা তোমার?’

চোর বললে, ‘বটে! এটা তো তোমার ঐ গাছের ছানা। এক্ষুনি হল। তুমি বুঝে শুনে কথা কও, নইলে বড় মুশকিল হবে।’

তখন সওদাগর গিয়ে রাজার কাছে নালিশ করল, ‘মহারাজ, আমি গাছে আমার ঘোড়াট বেঁধে ঘুমুচ্ছিলুম, আর ঐ বেটা এসে তাকে নিয়ে যাচ্ছে।’

রাজামশাই চোরকে ডেকে জিগগেস করলেন, ‘কি হে, তুমি ওর ঘোড়া নিয়ে যাচ্ছ কেন?’

চোর হাত জোড় করে বললে, ‘দোহাই মহারাজ! এটি কখনই ওর ঘোড়া নয়। এটি আমার গাছের ছানা। ছানাটি হতেই আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছিলুম, আর ঐ বেটা উঠে বলছে কিনা, ওটা ওর ঘোড়া! সব মিথ্যা কথা!’

তখন রাজামশাই বললেন, ‘এ তো ভারি অন্যায়। গাছের ছানা হল, আর তুমি বলছ সেটা তোমার ঘোড়া। তুমি দেখছি বড় দুষ্টু লোক। পালাও এখান থেকে!’ বলে তিনি ঘোড়াটা চোরকেই দিয়ে দিলেন।

সওদাগর বেচারা তখন মনের দুঃখে কাঁদতে-কাঁদতে বাড়ি ফিরে চলল। খানিক দূরে গিয়ে এক শিয়ালের সাথে তার দেখা হল।

শিয়াল তাকে কাঁদতে দেখে বললে, ‘কি ভাই? তোমার মুখ এমন ভার দেখছি যে! কি হয়েছে?’

সওদাগর বললে, ‘আর ভাই, সে কথা বলে কি হবে? আমার ঘোড়াটি চোরে নিয়ে গেছে। রাজার কাছে নালিশ করতে গেলুম, সেখানে চোর বললে কিনা, ওটা তার গাছের ছানা! রাজামশাই তাই শুনে ঘোড়াটি চোরকেই দিয়ে দিয়েছেন।’

এ কথা শুনে শিয়াল বললে, ‘আচ্ছা, এক কাজ করতে পার?’

সওদাগর বললে, ‘কি কাজ?’

শিয়াল বললে, ‘তুমি রাজামশায়ের কাছে গিয়ে বল, মহারাজ, আমার একজন সাক্ষী আছে। আপনার বাড়িতে যদি কুকুর না থাকে, তবে সেই সাক্ষীটিকে নিয়ে আসতে পারি।’

তখন সওদাগর আবার রাজার কাছে গিয়ে বললে, ‘মহারাজ, আমার একটি সাক্ষী আছে, কিন্ত আপনার বাড়ির কুকুরদের ভয়ে সে আসতে পারছে না। অনুগ্রহ করে যদি কুকুর তাড়িয়ে দেবার হুকুম দেন, তবে আমার সাক্ষীটিকে নিয়ে আসতে পারি।’

তা শুনে রাজামশাই তখুনি সব কুকুর তাড়িয়ে দেবার হুকুম দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, এখন তোমার সাক্ষী আসুক।’

এসব কথা সওদাগর শিয়ালকে এসে বলতেই শিয়াল চোখ বুজে টলতে-টলতে রাজার সভায় এল। সেখানে এসেই সে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঝিমুতে লাগল। রাজামশাই তা দেখে হাসতে-হাসতে বললেন, ‘কি শিয়াল পণ্ডিত? ঘুমুচ্ছে যে?’

শিয়াল আধ চোখে মিট-মিট করে তাকিয়ে বললে, ‘মহারাজ, কাল সারা রাত জেগে মাছ খেয়েছিলুম, তাই আজ বড্ড ঘুম পাচ্ছে।’

রাজা বললেন, ‘এত মাছ কোথায় পেলে?’

শিয়াল বললে, ‘কাল নদীর জলে আগুন লেগে সব মাছ এসে ডাঙ্গায় উঠল। আমরা সকলে মিলে সারা রাত খেলুম, খেয়ে কি শেষ করতে পারি!’ এ কথা শুনে রাজামশাই এমনি ভয়ানক হাসলেন যে, আর একটু হলেই তিনি ফেটে যেতেন। শেষে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললেন, ‘এমন কথা তো কখনো শুনিনি! জলে আগুন লাগে, এও কি কখনো হয়? এ সব পাগলের কথা!’

তখন শিয়াল বললে, ‘মহারাজ, ‘ঘোড়া গাছের ছানা হয়, এমন কথাও কি কখনো শুনেছেন? সে কথা যদি পাগলের না হয়, তবে আমার এই কথাটার কি দোষ হল?’

শিয়ালের কথায় রাজামশাই ভারি ভাবনায় পড়লেন।

ভেবে-চিন্তে শেষে তিনি বললেন, ‘তাই তো! ঠিক বলেছ! গাছের আবার কি করে ছানা হবে? সে বেটা নিশ্চয় তবে নিশ্চয় চোর।

তখনই হুকুম হল, ‘আন তো রে সেই চোর বেটাকে বেঁধে!’

অমনি দশ পেয়াদা গিয়ে চোরকে বেঁধে আনলে। আনতেই রাজামশাই বললেন, ‘মার বেটাকে পঞ্চাশ জুতো!’

বলতেই বলতেই পেয়াদারা তাদের নাগরা জুতো খুলে চটাশ-চটাশ চোরের পিঠে মারতে লাগাল। সে বেটা পঁচিশ জুতো খেয়ে চেঁচিয়ে বললে, ‘গেলুম গেলুম! আমি ঘোড়া এনে দিচ্ছি। আর এমন কাজ কখনো করব না!’ কিন্ত তার কথা আর তখন কে শোনে! পঞ্চাশ জুতো মারা হলে রাজা বললেন, ‘শিগগির ঘোড়া এনে দে, নইলে আরো পঞ্চাশ জুতো!’

চোর তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ঘোড়া এনে দিল। তারপর তার নিজ হাতে নাক-কান মলিয়ে মাথা চেঁছে, তাতে ঘোল ঢেলে হতভাগাকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হল। সওদাগর তার ঘোড়া পেয়ে শিয়ালকে আশীর্বাদ করতে লাগল।

GolpoKotha
GolpoKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments