শিক্ষামূলক গল্প: নীল ও কচ্ছপের বন্ধুত্ব
সাগরের ধারে এক ছোট্ট জেলে পরিবার বাস করত। তাদের নৌকা ছিল পুরনো, জালগুলো ছেঁড়া-ছেঁড়া, আর জীবিকা প্রতিদিনের ঢেউয়ের দয়ায় নির্ভরশীল। সেই পরিবারের ছোট ছেলে ছিল নীল। নামের সাথে অদ্ভুত মিল ছিল তার জীবনযাত্রার, নীল আকাশ, নীল সাগর আর তার স্বচ্ছ, সরল মন।
প্রতিদিন সকাল হতেই সে বাবার সঙ্গে সাগরে যেত। ছোট্ট হলেও সে ছিল দারুণ উদার। বাবার চোখ এড়িয়ে মাঝেমাঝেই সে ছোট মাছগুলোকে জাল থেকে ছাড়িয়ে আবার জলে ফিরিয়ে দিত।
সে বলত, “এগুলো তো এখনও বাচ্চা, বাড়তে দাও ওদের।”
একদিন, প্রচণ্ড রোদের দুপুরে জালে উঠে এল একটা ছোট কচ্ছপ। কচ্ছপরা চুপচাপ অভিনয় ভালো জানে, মরে যাওয়ার ভান, হাল ছেড়ে দেওয়ার ভান। এইটাও তাই করল।
বাবা ভাবলেন, “মরেই গেছে”, আর তাকে নৌকার এক কোণে ছুঁড়ে রেখে মাছ গোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
নীল সে সময়টায় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছিল, আর হঠাৎ তার বসার নিচ থেকে একটা নরম নড়াচড়া। চমকে উঠে দেখল কচ্ছপটা! বাঁচা–মরা–সীমারেখা পেরিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে, দুটো ছোট্ট চোখে অপার আকুতি।
নীলের বুক কেঁপে উঠল।
“তুই তো মরিসনি!”
সে কচ্ছপটাকে কোলে তুলল। হঠাৎ, কচ্ছপটা আস্তে করে মুখ তুলল, আর ফিসফিসিয়ে বলল, “আমাকে জলে ছেড়ে দাও, ভাই। আমি ফিরতে চাই আমার জলের ঘরে।”
নীল এক মুহূর্ত না ভেবে কচ্ছপটাকে আবার সাগরে ছেড়ে দিল।
সেদিন সন্ধ্যায় আকাশ কালো হয়ে এল। ঝড় উঠল হঠাৎ। ঢেউগুলো ক্রমশ পাগল হয়ে উঠল। নীল আর তার বাবার নৌকা একসময় সামলাতে পারল না সেই প্রকৃতির খামখেয়াল।
এক প্রচণ্ড ঢেউ এসে তাদের আলাদা করে দিল। নীল ডুবে যেতে লাগল সাগরের গহীনে।
শ্বাস রোধ হয়ে আসছিল, চারপাশের জল যেন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল অতল অন্ধকারে। কিন্তু ঠিক তখন, কোনো জাদুর মতো, তার শরীর হালকা হয়ে ভেসে উঠতে লাগল।
সে চোখ খুলে দেখল, দু’পাশে দুটো কচ্ছপ তাকে কাঁধে ভর করে ডাঙ্গার দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আর তখনই, কানের পাশে এক পরিচিত কণ্ঠস্বর ফিসফিস করে বলল, “তুই আমাকে বাঁচিয়েছিলি বন্ধু, আজ আমি তোকে বাঁচালাম।”
(সমাপ্ত)