Sunday, June 29, 2025
Homeশিক্ষামূলক গল্পশিক্ষামূলক গল্প – রসগোল্লা

শিক্ষামূলক গল্প – রসগোল্লা

শিক্ষামূলক গল্প – রসগোল্লা

এক গ্রাম্য ব্যক্তি কাঠের লাকরি যোগাড় করতে এক গাছে উঠলো। সে ডালের আগার দিকে বসে গোড়ার দিকে কোপাতে লাগলো। বোকা লোকটির এই ভয়ঙ্কর কাজ দেখে এক মুরব্বী রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সজোরে বলতে লাগলো, ‘এই তুই মরেছিস, তুই মরেছিস, মরেছিস!’ এ চিৎকার শুনে লোকটি গাছ থেকে নেমে আসলো। মুরব্বীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘চাচা আমি কি সত্যি মরে গেছি?’

মুরব্বী মনে মনে ভাবলেন এ লোকটিকে বোঝানো সম্ভব হবে না, কাজেই তিনি লোকটির কথার কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন। লোকটি ভাবলো, মৃত মানুষের সাথে কথা বলা যায়না, এ জন্য মুরব্বী আমার কথার কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলো। অতএব নিঃসন্দেহে আমি মরে গেছি। এ চিন্তা করে লোকটি গ্রামের সবাইকে হাত জোড় করে অনুরোধ করতে লাগলো, ‘আপনারা আমাকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, আমি মরেগেছি।

কিন্তু তার কথায় কেউ সাড়া দিলো না। অগত্যা সে নিজেই একটি কোদাল জোগাড় করলো এবং নদীর ধারে গিয়ে কবর খুড়তে লাগলো। কবর খোঁড়া শেষ হলে কোদালটি রেখে কবরের ভিতর মরার মতো পড়ে রইল।

ঐ নদী দিয়ে লঞ্চ আসা যাওয়া করতো। একটি লঞ্চ এসে এক ইংরেজ সাহেবকে নদীর ঘাটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সাহেবটি সরকারি চাকুরী নিয়ে ঐ গ্রামে এসেছিলেন। কি একটা কাজের তদন্ত করতে তিনি ডাক বাংলায় যাবেন। সাথে রয়েছে বিছানাপত্র ও একটি বাক্স। কিন্তু কে বয়ে নিয়ে যাবে। এগুলো আশে পাশে কোন মানুষও দেখা যাচ্ছে না। অবশেষে দূরে চোখে পড়লো একটি কোদাল। সদ্য মাটি কাটা হয়েছে। কোদালটি এখনো সরানো হয়নি।

মাটি কাটা লোকটি নিশ্চয়ই আশে পাশে কোথাও রয়েছে। কোদালটি লক্ষ করে সাহেব অগ্রসর হলেন। দেখেন সেখানে একটি গর্ত। গর্তের মধ্যে একটি মানুষ শুয়ে রয়েছে।

সাহেব তাকে ডাকলেন, ‘এদিকে এসো।’

লোকটি চিন্তা করল, আমি যে মৃত্যুবরণ করেছি হয়তো এ ভদ্রলোক জানেন না। তাই আমার সাথে কথা বলতে এসেছেন। কাজেই লোকটি কোন সাড়া দিল না। চুপ করে শুয়ে পিট্ পিট্ করে দেখতে লাগলো।

ভদ্রলোক কয়েকবার ডাকলেন। কিন্তু ডাকে সাড়া না পেয়ে বিরক্ত হয়ে কাছে গিয়ে তার কোমরে এমন জোরে এক লাথি মারলেন যে লোকটি তড়াক করে উঠে বসে পড়লো।

লোকটি চিন্তা করলো, শুনেছি কবরে মুনকার-নাকির এসে থাকে। এ লোকটি নিশ্চয়ই মুনকার-নাকির হবে। এর কথা অমান্য করা যাবে না। যা বলবে তাই শুনতে হবে।

সুতরাং যখন সাহেব বললো, ‘আমার সাথে এসো’। লোকটি তার সাথে নদীর ঘাটে গিয়ে দাঁড়ালো। সাহেব ওর মাথায় বাক্স ও বিছানা-পত্রের পোটলাটি চাপালেন এবং একটি মিষ্টির হাঁড়ি ছিল সেটাও হাতে দিয়ে বললেন, ‘চলো’।

এ বলে সাহেব ওকে নিয়ে ডাক বাংলায় পৌঁছলেন। ওর মাথা থেকে জিনিস পত্র নামিয়ে নিয়ে ওকে আট আনা পয়সা দিলেন। আর মিষ্টির হাড়ি থেকে দুইটি রসগোল্লা হাতে দিয়ে বললেন, ‘এবার যাও’।

লোকটি আনন্দে গদ্ গদ্ হয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। তখন সন্ধ্যা উৎরিয়ে গেছে। রাস্তায় এক ওয়াজ মাহফিলে দেখতে পেলো। এক মাওলানা সাহেব মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করছেন, ‘আমাদের সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। মুনকার-নাকীরের তিনটি প্রশ্নের জওয়াব সঠিকভাবে না দিতে পারলে কবরে জাহান্নামের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু সর্বদা কামড়িয়ে জীবনকে লাঞ্ছনায় ভরে তুলবে।

লোকটি এ কথা শ্রবণ করে স্থির থাকতে পারলো না। এক লাফে মঞ্চে উঠে দাঁড়ালো। উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, ‘ভাইসব এ মৌলভী সাহেবের কথা বিশ্বাস করবেন না। কবরে এসব কিছুই ঘটে না। আমি এই মাত্র কবর থেকে উঠে আসলাম। কবরে কোন প্রশ্ন হয় না। কোন ধরণের আগুন জ্বালানো হয় না, কোন সাপ আসে না এবং কোন বিচ্ছুও কামড়ায় না। কবরে যা ঘটে তা হলো এই যে, একজন মুনকার-নাকীর বুট জুতা পায়ে এসে এমন জোড়ে কোমরে এক লাথি মারে যে মৃতব্যক্তি শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে।

তারপর সাথে করে কিছু দূর নিয়ে মাথায় বোঝা চাপানো হয়। সেখান থেকে আবার বাড়িতে নিয়ে বোঝা নামানোর পর বিদায় দেওয়ার সময় আট আনা পয়সা দেওয়া হয়। আর খাওয়ার জন্য দেওয়া হয় মাত্র দুটি রসগোল্লা। এর বেশি আর কিছুই কবরে দেওয়া হয় না।

তো ভাইয়েরা! কবরে খাওয়ানো হয় রসগোল্লা! কাজেই এ গ্রাম্য লোকটি কবরের বিষয়টি বুঝতে যেরূপ ভুল করেছে সেরূপ বর্তমানে অনেক বুদ্ধিজীবী রয়েছেন যারা ওলামায়ে কেরামের উক্তিকে হাল্কাভাবে নিয়ে বিচার করে থাকেন। বস্তুতঃ আলেমদের নয়, বরং আল্লাহর বাণীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধার ঘাটতি রয়েছে।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments