শিক্ষামূলক গল্প – দুই বাজপাখি
অনেক দূরের এক দেশে ছিলেন এক রাজা। তিনি ছিলেন খুবই দয়ালু ও জ্ঞানী। একদিন তার জন্মদিনে, একজন দূত রাজাকে এক বিশেষ উপহার দিল, দুটি ছোট বাজপাখির ছানা।
বাজপাখি খুব শক্তিশালী ও সাহসী পাখি। তারা অনেক উঁচুতে উড়তে পারে এবং ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে। রাজা উপহার পেয়ে খুব খুশি হলেন। তিনি ভাবলেন, “আমি এগুলোকে প্রশিক্ষণ দেব, যাতে তারা রাজ্যের কাজে আসতে পারে।”
তিনি তখন রাজ্যের একজন বিখ্যাত বাজপাখি প্রশিক্ষককে ডেকে বললেন, “এই পাখিগুলোকে উড়তে ও শিকার ধরতে শেখাও।”
প্রশিক্ষক আনন্দের সাথে কাজ শুরু করলেন। দিন গেল, সপ্তাহ গেল, এমনকি কয়েক মাসও কেটে গেল। একদিন প্রশিক্ষক রাজদরবারে এসে বললেন, “মহারাজ, একটা পাখি খুব ভালো শিখেছে। সে এখন আকাশে উড়ে বেড়ায় আর নিজে নিজেই শিকার ধরে।”
রাজা খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আর অন্য পাখিটা?”
প্রশিক্ষক মাথা নিচু করে বললেন, “মহারাজ, সে প্রথম দিন থেকে একই ডালে বসে আছে। না উড়ছে, না নড়ছে! খাবারও তাকে সেখানেই এনে দিতে হয়।”
রাজা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি অনেক চিকিৎসক, যাদুকর, এমনকি জ্ঞানী পণ্ডিতদের ডেকে আনলেন। সবাই পাখিটিকে দেখতে এলো, নানা চেষ্টা করল, কিন্তু কেউই তাকে উড়াতে পারল না।
প্রতিদিন জানালার বাইরে রাজা তাকিয়ে দেখতেন, পাখিটি একই ডালে বসে আছে, একটুও নড়ছে না।
অবশেষে, হতাশ হয়ে রাজা ঘোষণা দিলেন, “যে এই পাখিটিকে উড়তে শেখাতে পারবে, তাকে আমি পুরস্কৃত করব।”
পরদিন সকালে, রাজা জানালার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন! বাজপাখিটি আকাশে ডানা মেলে উড়ছে। সে বাগানের চারপাশে ঘুরছে, আনন্দে ও সাহসে উড়ছে।
রাজা খুশি হয়ে বললেন, “এই অলৌকিক কাজ কে করেছে? তাকে রাজদরবারে নিয়ে আসো।”
সামান্য কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, একজন সাধারণ কৃষক এসে হাজির হয়েছে। পরনে সাদামাটা জামা, মুখে লজ্জার হাসি।
রাজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি পাখিটিকে উড়তে শিখিয়েছ? তুমি কি কোনো যাদুকর?”
কৃষক বিনয়ের সঙ্গে মাথা নিচু করে বলল, “না, মহারাজ। আমি কোনো যাদুকর নই। আমি শুধু সেই ডালটা কেটে ফেলেছি, যেখানে বাজপাখি টি বসে ছিল।”
রাজা বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “মানে?”
কৃষক বলল, “পাখিটা ডালে বসে ছিল, কারণ সে জানত না সে উড়তে পারে। ডালটি ছিল তার নিরাপদ জায়গা। আমি শুধু সেই ‘নিরাপদ’ জায়গাটি সরিয়ে দিয়েছি। তখন সে বুঝল, তার পাখা আছে, সে উড়তে পারে।”
শিক্ষা:
আমাদের জীবনেও অনেক “ডাল” আছে, যা আমাদের আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে হয়। কেউ কেউ নিরাপত্তার আশ্রয় ছেড়ে এগিয়ে যায়, ঝুঁকি নেয়, এবং নতুন কিছু শেখে। আবার অনেকে সেই নিরাপদ অবস্থায় বসেই থাকে, পরিবর্তনের ভয় পায়। কিন্তু কোনো একসময় জীবন এমন কিছু ঘটায়, যা আমাদের আরামদায়ক শাখা থেকে ফেলে দেয়। তখনই আমরা বুঝতে পারি, আমাদেরও উড়বার ক্ষমতা আছে, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার শক্তি আছে।