Wednesday, June 18, 2025
Homeশিক্ষামূলক গল্পশিক্ষামূলক গল্প – ঈশ্বরের ইশারা

শিক্ষামূলক গল্প – ঈশ্বরের ইশারা

শিক্ষামূলক গল্প – ঈশ্বরের ইশারা

এক সময়ের কথা। এক গরিব কৃষক ছিল, নাম তার রমেশ। প্রতিদিনের মতো সে সকালবেলা নিজের কাঠের টুকরো কুড়াতে জঙ্গলে গেল। কাঠের টুকরো সংগ্রহ করে এনে সে বিক্রি করত, আর সেই টাকায় চাল, ডাল কিনে তার ছোট্ট সংসার চলত।

সেদিন সকালে রমেশ যখন জঙ্গলের ভেতরে ঢুকছে, তখন হঠাৎ তার চোখ পড়ল এক অদ্ভুত দৃশ্যের দিকে। একখানা শিয়াল গড়িয়ে বেড়াচ্ছে ঘাসে। কিন্তু সে দেখে অবাক হয়ে গেল, শিয়ালের সামনের দুটি পা-ই নেই! অথচ সে খুবই খুশি মনে, মাটিতে গড়াগড়ি করে খেলছে।

রমেশ থেমে গেল। সে ভাবতে লাগল,“এই শিয়াল তো চলতেই পারে না ঠিকমতো, শিকার করাও তো সম্ভব নয়। তাহলে এটি বাঁচে কী করে? খায় কীভাবে?”

সে তখন গাছের ছায়ায় বসে দেখতে লাগল, হয়তো কিছু রহস্য বোঝা যাবে।

হঠাৎ দূরে একটা গর্জন শুনে সে চমকে উঠল। এক বিশাল সিংহ শিকার মুখে করে সেই দিকে এগিয়ে আসছে! জঙ্গলের অন্য প্রাণীরা দৌড়ে পালিয়ে গেল। রমেশ নিজেও ভয়ে গাছে উঠে পড়ল। সিংহটা চলে এল শিয়ালের কাছে, তার শিকারের কিছুটা অংশ মাটিতে রেখে দিয়ে শান্তভাবে চলে গেল।

রমেশ তো চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করত না। “এই সিংহই কি শিয়ালটিকে খাওয়াচ্ছে? প্রতিদিন?” এমন ঘটনা তো আগে কোনোদিন শোনেনি।

পরের দিনও সে এল। আবার একই দৃশ্য। সিংহ শিকার আনল, আর সেই পা-ছাড়া শিয়ালের সামনে খাবার রেখে দিল। শিয়াল খুশি মনে খেয়ে নিল।

এবার রমেশের মনে এক অলৌকিক ভাবনা জাগল। সে মনে মনে বলল, “ওহ, ঈশ্বর কত মহান! শিকার করতে না পারলেও এই শিয়াল বেঁচে আছে শুধু ঈশ্বরের কৃপায়। ঈশ্বর নিজেই তার জন্য ব্যবস্থা করছেন!”

সে গভীরভাবে ভাবতে লাগল, “যে ঈশ্বর এক শিয়ালের মুখেও খাবার পৌঁছে দিতে পারেন, তিনি নিশ্চয়ই আমার মুখেও খাবার পাঠাবেন। আমাকে আর পরিশ্রম করার দরকার কী?”

এই বিশ্বাস নিয়ে রমেশ নিজের কাজকর্ম ছেড়ে দিল। সে জঙ্গলের পাশে একটা শান্ত জায়গায় বসে থাকল, চোখ বন্ধ করে শুধু প্রার্থনা করে যেতে লাগল, “ঈশ্বর, আপনি যেভাবে সেই শিয়ালকে খাওয়ান, আমাকেও খাওয়ান।”

দিন কেটে যেতে লাগল। প্রথমে একদিন, তারপর দুই দিন… তারপর তিন দিন। কিন্তু কেউ এল না। কেউ তার সামনে খাবার রাখল না। কেউ জঙ্গল থেকে কিছু এনে তাকে খাওয়াল না।

রমেশ দুর্বল হয়ে পড়ল। শরীর শুকিয়ে গেল। মনে বড় হতাশা। সে ভাবতে লাগল, “আমি তো বিশ্বাস করেছিলাম ঈশ্বরের উপরে। তবু কেন ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করছেন না?”

ঠিক সেই সময় একজন জ্ঞানী সন্ন্যাসী জঙ্গলের পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দুর্বল রমেশকে দেখে থেমে গেলেন। তার প্রতি মায়া হলো। সন্ন্যাসী কাছে এসে জল দিলেন, খাবার দিলেন, মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহে বললেন, “তুমি এখানে এভাবে পড়ে আছো কেন, ভাই?”

রমেশ কাঁদতে কাঁদতে পুরো ঘটনাটা বলল। সে বলল, “সন্ন্যাসী বাবা, আমি জঙ্গলে এক পা-ছাড়া শিয়ালকে দেখেছি, যাকে এক সিংহ রোজ খাওয়াতে আসে। আমি ভাবলাম, যিনি শিয়ালকে খাওয়াতে পারেন, তিনি নিশ্চয়ই আমাকেও খাবার দেবেন। তাই আমি শুধু বসে থাকি, কিন্তু কেউ এল না। ঈশ্বর কি আমাকে ভুলে গেছেন?”

সন্ন্যাসী হেসে রমেশের মাথায় হাত রেখে বললেন, “প্রিয় , তুমি ঈশ্বরের বার্তাটি ভুল বুঝে বসেছো। ঈশ্বর তোমাকে শিয়ালের মতো হয়ে বসে থাকতে বলেননি। তিনি চেয়েছিলেন তুমি সিংহের মতো হও। যে নিজের শক্তিতে অন্যকে সাহায্য করে, ভয় না পেয়ে এগিয়ে যায়, কাজ করে, আর প্রয়োজনে দুর্বলকে সাহায্য করে।”

রমেশ অবাক হয়ে সন্ন্যাসীর দিকে চেয়ে থাকল। তিনি আবার বললেন, “তুমি নিজের জীবনের সিংহ হও। শিয়ালের মতো বসে থাকা নয়, বরং অন্যকে খাওয়াতে পারো এমন একজন হও। তাহলেই ঈশ্বর তোমার ভিতর বাস করবেন।”

রমেশ তখন চোখ মেলে সব বুঝে গেল। সে আবার নিজের কাজে ফিরে গেল। জঙ্গলে কাঠ কুড়িয়ে আনতে লাগল, মেহনত করে নিজের খাবার জোগাড় করল। এবং মনেপ্রাণে ঠিক করল, যদি কোনো দিন সে সিংহের মতো কারো পাশে দাঁড়াতে পারে, তবে নিশ্চয়ই ঈশ্বর খুশি হবেন।

শিক্ষা:
আমাদের জীবনেও অনেক সময় এমন ঘটে, আমরা কোনো ঘটনাকে ঠিকভাবে না বুঝে উল্টোভাবে বুঝে ফেলি। ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে কিছু না কিছু শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে পাঠান, তাদের উদ্দেশ্য থাকে আমরা যেন সেই সামর্থ্য দিয়ে অন্যের উপকার করি, নিঃসহায় হয়ে বসে না থাকি।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments