শিক্ষনীয় গল্প – ঘরে ফেরা
ঢাকার উত্তরায় একটি ছোট্ট ড্রেনে থাকত এক ব্যাঙের পরিবার। বাবা ব্যাঙ, মা ব্যাঙ আর তাদের দুই ছানা। ড্রেনের পানি ছিল ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা। ছোট ব্যাঙের ছানারা সে পানিতে থাকতে একেবারেই পছন্দ করত না।
বৃষ্টি নামলেই তারা খুশিতে লাফিয়ে বেরোতে চাইত। বৃষ্টির টলটলে পানিতে ভিজতে ভীষণ ভালো লাগত তাদের। কিন্তু বাবা-মা বারবার শাসিয়ে দিত। না না, ড্রেনের বাইরে যেও না। রাস্তায় মানুষের পায়ের চাপা পড়তে পারো, কিংবা গাড়ির চাকায় পিষ্ট হতে পারো।
তবুও দুই ছানার মন ভরে না। একদিন বড় ছানাটি বাবাকে প্রশ্ন করল, বাবা, সব ব্যাঙ কি ময়লা পানিতেই থাকে?
বাবা ব্যাঙ একটু হেসে বলল, আরে না, অনেক ব্যাঙ থাকে ঝকঝকে পরিষ্কার পুকুরে। সেখানে পানি থাকে নির্মল, চারপাশে সবুজ গাছ আর খোলা জায়গা।
এ কথা শুনে ছানাটির মন খারাপ হয়ে গেল। সে স্বপ্ন দেখতে লাগল, একটা সুন্দর পুকুরে থাকবে, খোলা আকাশের নিচে বন্ধুদের সঙ্গে খেলবে, আনন্দে দিন কাটাবে।
সে বাবাকে আবার জিজ্ঞেস করল, বাবা, তুমি কীভাবে এই ড্রেনে এলে?
বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি ছোট থাকতে গ্রামেই থাকতাম। আমাদের পুকুর ছিল একেবারে স্বচ্ছ পানির। লাফিয়ে বেড়ানো, মাছেদের সঙ্গে খেলা, পুকুরপাড়ে গান গাওয়া, কী আনন্দই না ছিল।
কিন্তু একদিন খেলতে খেলতে ভুল করে একটা ট্রাকে উঠে পড়ি। ট্রাক এসে থামে এই ঢাকায়। তারপর থেকেই এখানে আটকে আছি।
ছোট্ট ছানাটি বাবার গল্প শুনে আর ঘুমাতে পারল না। তার মনে শুধু পুকুরের ছবি ভাসতে লাগল। অবশেষে এক রাতে সে সাহস করে বাবাকে বলল, বাবা, চল না আমরা আবার গ্রামে ফিরে যাই।
বাবা চুপ করে রইল। কিছু বলল না। দিন গড়িয়ে গেল, কিন্তু ছানাটির আশা ফুরাল না।
কিছুদিন পর, এক রাতে বাবা ব্যাঙ সবার ঘুম ভাঙাল। ফিসফিস করে বলল, এসো সবাই, আজই চল।
চার ব্যাঙ একসঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল একটি ট্রাকের পেছনে। গাড়ি চলতে লাগল হুড়মুড়িয়ে। শহরের আলো পেছনে ফেলে ট্রাক এগিয়ে চলল টঙ্গী ছাড়িয়ে, সিলেটের পথে।
ভোরবেলায় ট্রাক থামল কালীগঞ্জে। রাস্তার ধারে ছিল এক সুন্দর পুকুর। গাছপালা, পাখির গান আর ঝকঝকে স্বচ্ছ পানি দেখে ব্যাঙেদের চোখ জুড়িয়ে গেল।
তারা আনন্দে লাফিয়ে নামল পুকুরে। ছানারা খুশিতে তিড়িংবিড়িং করে লাফালাফি শুরু করল। মা-বাবার চোখে তখন শান্তি আর তৃপ্তির হাসি।
ঢাকার ময়লা ড্রেন ছেড়ে অবশেষে তারা পেল নিজেদের স্বপ্নের ঠিকানা।
শিক্ষা
যেখানে জীবন কষ্টময়, সেখান থেকে সাহস নিয়ে বেরিয়ে আসলেই পাওয়া যায় শান্তি আর সুখের ঠিকানা।