শিয়াল পণ্ডিত এবং আখের ফল
অনেক, অনেক দিন আগের কথা। এক জঙ্গলে বাস করত এক শিয়াল পণ্ডিত। তার নাম শুনেই বোঝা যায়, সে ছিল বেশ বুদ্ধিমান। তবে শিয়াল পণ্ডিত ছিলেন খুব লোভী। বিশেষ করে আখ খেতে তার খুব ভালো লাগত। মিষ্টি, সরস আখ যখন মুখে যায়, তখন সে যেন রাজা হয়ে যায়।
প্রায় প্রতিদিনই সে চুপিচুপি গ্রামের পাশে থাকা এক আখক্ষেতে যেত। সেখানে সে অনেক আখ খেত আর মজা করত।
একদিন আখ খেতে গিয়ে সে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পেল। এক গাছের ডালে ঝুলে আছে গোলাকৃতি একটা চাক, যার গা চকচক করছে। সেটা দেখে শিয়ালের চোখ চকচক করে উঠল।
সে ভাবল, “আহা, এটা নিশ্চয়ই আখের ফল! আখ তো এত মিষ্টি, এই ফল না জানি কতই মিষ্টি হবে!”
সে একটুও দেরি না করে ফলটার দিকে এগিয়ে গেল। মুখ দিয়ে কামড় দিতে যাবে, এমন সময় বীইইইইইইইইই… করে আওয়াজ উঠল।
আর যায় কোথায়! সেই গোল চাকটি ছিল আসলে এক ভিমরুলের চাক!
ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো এক ঝাঁক রাগী ভিমরুল। তারা এসে শিয়াল পণ্ডিতের গায়ে একের পর এক হুল ফুটাতে লাগল।
“আহ্-উফ্ বাঁচাও, ” বলে শিয়াল দৌড়াতে লাগল। মাথায়, পিঠে, পায়ে কামড় খেয়ে সে ছুটে পালাল। অনেক দূর গিয়ে এক ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রইল।
ভিমরুলেরা কিছুক্ষণ ওড়াউড়ি করে নিজেদের চাকে ফিরে গেল। আর শিয়াল হাঁপাতে হাঁপাতে ভাবল, “এই আমি কী করলাম, যেটা চিনিই না, সেটা খেতে গেলাম কেন?”
তবু তার মনের মধ্যে একটা কৌতূহল থেকে গেল, “ফলটা যদি খেতে পারতাম, না জানি কত মিষ্টি হতো।”
পরদিন সারা শরীরে ব্যথা নিয়ে শিয়াল ক্ষেতে গেল না। কিন্তু চুপচাপ বসে বসে ভাবতে লাগল, “আমি তো রোজ ক্ষেতে যাই, আখ খাই, কোনো বিপদ হয় না। কিন্তু ওই ফল খেতে গিয়ে যত ঝামেলা।”
তারপর সে নিজেই একটা উপায় ভেবে ফেলল, “ওই ফলের ভেতর নিশ্চয়ই পোকা ছিল। ওরা আমাকে কামড়েছে। যদি আগে লাঠি দিয়ে একটু নাড়াতাম, তাহলে পোকাগুলো বেরিয়ে যেত। তখন আমি আরাম করে খেতে পারতাম।”
দু’দিন বিশ্রামের পর আবার নতুন আশা নিয়ে সে গেল সেই আখক্ষেতে। এবার ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। সাথে নিয়েছে একটা মজবুত লাঠি।
যেই না সে সেই চাকটার কাছে গিয়ে লাঠি দিয়ে নাড়াতে শুরু করল, আবার সেই বীইইইইইইই…!
ভিমরুলের দল ফিরে এলো আগের থেকেও বেশি রাগ নিয়ে।
শিয়াল দৌড় দিল, কিন্তু এবার সে আগের চেয়েও ভয়ানকভাবে কামড় খেল। মাথা, কান, লেজ, পা কোথাও বাদ গেল না।
বেচারা শিয়াল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে থাকল একটা গর্তে।
এইবার সে ঠিক করল, “এবার সত্যিই শিক্ষা পেলাম, আমি আখ খাব, আখের ফল নয়। আর যদি সেই ‘ফল’ খেতে যাই, তবে তো আমি বেঁচে থাকব না।”
গল্পের শেষ কথা ও শিক্ষা
এরপর থেকে শিয়াল পণ্ডিত আর কোনো দিন ভিমরুলের চাকে হাত দেয়নি। আখক্ষেতে গিয়েও সে চুপচাপ নিজের আখ খেত এবং চকচকে গোল চাকটার দিকে আর তাকাত না।