শিক্ষামূলক গল্প: শখের ঘোড়া
পাহাড়ঘেরা সবুজ গ্রামের এক কোণে থাকতেন এক বয়স্ক কৃষক, যার অদ্ভুত এক শখ ছিল বিভিন্ন জাতের ঘোড়া সংগ্রহ করা। খামারের পাশে যত ঘোড়া দৌড়াত, ততই যেন তার চোখ ঝলমল করত। কিন্তু তার সংগ্রহে ছিল না একটিই ঘোড়া, কালো রঙের, গ্রীবা হালকা রুপালি ছায়া দেওয়া এক বিরল জাতের ঘোড়া, যার মালিক ছিলেন পাশের জমির নির্লোভ এক গরিব কৃষক।
কিন্তু শখ তো সহজে থামে না। বয়স্ক কৃষক প্রতিদিন অনুরোধ, তদবির, উপহার দিয়ে চেষ্টা করতেন ঘোড়াটি কেনার, আর প্রতিবেশী প্রতিদিনই তা ফিরিয়ে দিতেন।
শেষমেশ, অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর সে ঘোড়াটি বিক্রি করতে রাজি হলো, চোখে একধরনের চিন্তার রেখা নিয়ে।
নতুন ঘোড়াটিকে পেয়ে বৃদ্ধ কৃষক আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন।
কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেই ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়ল। চোখ জ্বলজ্বলে, দেহ নিস্তেজ, খেতে চায় না, হাঁটতেও পারে না। ডাক্তার এল। অনেকক্ষণ পরীক্ষা করে সে বলল-
“এই ঘোড়া এক মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত। ওষুধ দেব, তিনদিন চালাও। না সেরে উঠলে, চতুর্থ দিনে মেরে ফেলতে হবে, নইলে পুরো খামারের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।”
ঘোড়াটির কপালে তখন শুধু ঘাম।
কিন্তু একপ্রাণ, নীরব বন্ধু ছিল তার পাশে এক ছোট্ট ছাগল। ঘোড়াটি অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই ছাগলটি তার পাশ ছাড়েনি।
প্রথম দিন ছাগলটি কানে কানে বলল, “বন্ধু, তুমি চাইলে উঠতে পারো। নিজেকে হারিয়ে দিও না।”
দ্বিতীয় দিন বলল, “আজ একটু চেষ্টা করো হাঁটার। আমি তোমার পাশে থাকব, ধাক্কা দিলে দুঃখ কোরো না।”
তৃতীয় দিন, যখন ডাক্তার এসে হাল ছেড়ে দিল, আর কৃষক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কাল ওকে শেষ করে দিতে হবে,” তখন ছাগলটি আবার ফিসফিস করে বলল-
“এটাই শেষ দিন। সবকিছু নিংড়ে দাও আজ। আমি তোমার সঙ্গে আছি।”
সেই কথায় যেন প্রাণ ফিরে পেল ঘোড়াটি। প্রথমে মাথা তুলে দাঁড়াল। তারপর এক পা, দুই পা… অবশেষে দৌড়াতে শুরু করল মাঠের দিকে।
কৃষক দূর থেকে সব দেখল। চিৎকার করে উঠল-
“ঘোড়াটা সুস্থ! ঘোড়াটা বাঁচে গেছে! হে ঈশ্বর, আজ খুশির দিন!
এই যে, কেউ কি আছো? আজ অনেক আনন্দ হবে।
ছাগলটাকে জবাই করো, মাংস রান্না হবে।”
শিক্ষাঃ
অনেক সময় যারা নীরবে পাশে থাকে, যারা প্রকৃত বন্ধু হয়ে নিঃশব্দে সাহস জোগায়, তাদের অবদান বুঝে ওঠা আমাদের হয়ে ওঠে না।
আর সেই না-দেখা নায়কেরা কত সহজে বিসর্জন দেয় নিজেদের অস্তিত্ব, অন্যের আলো দেখে খুশি হয়ে।