মজার গল্পঃ সত্যিকারের অলস
আগেকার দিনে রাজা-বাদশাদের নানা রকমের অদ্ভুত খেয়াল থাকিত। এখনকার মতো দেশের অর্থ ব্যয় করিতে তাহাদের কাহারও কাছে কোনো জবাবদিহি করিতে হইত না। তাই খেয়ালখুশিমতো তাহারা টাকা-পয়সা খরচ করিতেন। এখনকার রাজারা কিন্তু এরূপ পারেন না।
তখন প্রত্যেক রাজবাড়িতে কতক গুলি অলস লোক থাকিত। রাজারা আলসেখানায় সেই অলস লোকগুলিকে দেখিয়া বড়ই আনন্দ পাইতেন। অলস লোকদের লইয়া রাজায় রাজায় আবার প্রতিযোগিতাও হইত। কোনো রাজার আলসেখানায় যদি সব চাইতে খুব নামকরা আলসে থাকিত, সেই রাজার খুব সুনাম হইত।
সেবার দেখা গেল, রাজার রাজ্যের যত লোক কেহ কাজ করে না। সকলে আসিয়া জুটিয়াছে রাজার আলসেখানায়। কারণ সেখানে আসিলেই যত খুশি ভাতমাছ দুধ-মাখন খাইতে পাওয়া যায়। কে আর কাজ করে! রাজা মুশকিলে পড়িলেন।
তিনি মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দেখো মন্ত্রী! আমার রাজ্যে কেহই কাজ করে না। সকলেই আলসেখানায় আসিয়া জুটিয়াছে। অলসদের খাওয়াতেই রাজস্বের সব খরচ হইয়া যায়। তুমি এর কোনো উপায় বলিতে পারো?’
মন্ত্রী হাত জোড় করিয়া বলিলেন, ‘মহারাজা! কোনো চিন্তা করিবেন না। আমি ইহার প্রতিকার করতেছি।’
সেদিন দুপুরবেলা রাজার আলসেখানায় সকল অলস ব্যক্তি বিছানায় গড়াগড়ি যাইতেছে, এমন সময় মন্ত্রীর আদেশে আলসেখানার ঘরে আগুন দেওয়া হইল। আগুনের আঁচ পেয়ে একে একে সকল আলসে পালাইয়া গেল।
কিন্তু দুইজন আলসে যেমন শুইয়া ছিল, তেমনি শুইয়া রহিল। আগুন যখন তাদের মাথার ওপর আসিয়াছে, তখন একজন আলসে গা মোড়ামুড়ি দিয়া দ্বিতীয় আলসেকে বলিল, ‘কত রবি জ্বলে!’ (কেমন সূর্য জ্বলিতেছে!)
দ্বিতীয় অলস ব্যক্তি যেমন শুইয়া ছিল, তেমনিভাবে শুইয়াই উত্তর করিল, ‘কেবা আঁখি মেলে।’ (সূর্য উঠিয়াছে তাহাতে কী হইয়াছে? কে চোখ মেলিয়া চাহিয়া দেখে?)
রাজা তখন বুঝিতে পারিলেন যে এই দুজনই সত্যিকারের অলস। রাজার লোকেরা তখন ধরাধরি করিয়া সেই দুইজন অলস ব্যক্তিকে আগুনের হাত হইতে বাঁচাইল। সেই হইতে তাহারা দুইজনই মাত্র রাজার আলসেখানায় রহিল।
পরে সব আলসে যার যার বাড়ি যাইয়া কাজকর্ম করিতে লাগিল।