Thursday, August 14, 2025
Homeমজার গল্পতাহা আমি জানি – জসীম উদ্দীন

তাহা আমি জানি – জসীম উদ্দীন

তাহা আমি জানি – জসীম উদ্দীন

এক রাখাল ছেলে মাঠে গরু ছেড়ে দিয়ে গাছ তলায় বসে আছে। এমন সময় এক মুসাফির এসে তাঁকে বলল, “বাবা, তুমি আমাকে একটু পানি খাওয়াবে? আমার বড়ই তৃষ্ণা পেয়েছে।”

রাখালটি মুসাফিরকে নিজের জন্যে রাখা পানি খেতে দিল। পানি খেয়ে মুসাফির খুবই খুশী হল। যাওয়ার সময় মুসাফির রাখাল ছেলেটিকে একটি মন্ত্র শিখেয়ে দিয়ে গেল,

“তুমি কেন ঘষ,

আমি তাহা জানি;

তুমি কেন ঘষ,

আমি তাহা জানি।”

আরও বলে গেল, “তুমি মাঝে মাঝে এই মন্ত্রটি জোরে জোরে আওড়াবে। হয়তো তোমার কপাল ফিরতেও পারে।”

সেই হতে রাখাল ছেলেটি যখন তখন এই মন্ত্রটি আওড়ায়। পাড়ার লোকে ভাবে সে পাগল হয়েছে।

সে দেশের বাদশা বড় ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে ভিখারীর পোশাক পরে প্রজাদের অবস্থা জানতে বের হতেন। সেদিন ঘুরতে ঘুরতে বাদশা দেখতে পেলেন কয়েকজন চোর একটি বাড়িতে সিঁদ কাটছিল। সেই পথ দিয়ে যেতে যেতে ছেলেটি জোরে জোরে মন্ত্র পড়ল,

“তুমি কেন ঘষ,

আমি তাহা জানি,

তুমি কেন ঘষ,

আমি তাহা জানি।”

অমনি চোরেরা সিঁদ-কাঠি নিয়ে দৌড়ে পালাল। বাদশা তখন ভাবলেন, এই রাখাল বালক নিশ্চয় কোনো কেরামতি পেয়েছে। তারই ফলে সে চোরদের সকল খবর জানতে পারে।

রাখাল কেমন করে কাহার নিকট হতে এই মন্ত্রটি শিখেছিল তা বাদশাকে জানাল। তারপর বলল, আমার আর কোনোই কেরামতি নাই। আমি শুধু জোরে জোরে এই মন্ত্রটি পড়েছি “তুমি কেন ঘষ আমি তাহা জানি, তুমি কেন ঘষ আমি তাহা জানি।”

বাদশা রাখাল ছেলেটিকে বহু পুরস্কার দিয়ে তার নিকট হতে এই মন্ত্রটি শিখে আসলেন।

বাদশার উজীর বড়ই খারাপ লোক। সে গোপনে গোপনে বাদশাকে খুন করে নিজে বাদশা হওয়ার মতলবে ছিল। তাই সে বাদশার নাপিতকে বহু টাকা ঘুষ দিয়ে বলে দিল, “তুমি যখন কাল বাদশার দাড়ি কামাবে তখন ক্ষুর দিয়ে তাঁহার গলা কেটে ফেলবে।”

নাপিত বহু টাকা ঘুষ পেয়ে উজীরের কথায় রাজী হল।।

পরদিন বাদশার দাড়ি কাটতে এসে নাপিত দেখল তার ক্ষুরে তেমন ধার নাই। সে পাথরের উপর ঘষিয়া ক্ষুরে ধার দিতে লাগল।

বাদশা ভাবলেন, সেই রাখাল বালকের মন্ত্রটি জোরে জোরে আওড়ে (পড়ে) দেখি কি ফল হয়। বাদশা মন্ত্র পড়তে লাগলেন

“তুমি কেন ঘষ,

আমি তাহা জানি,

তুমি কেন ঘষ,

আমি তাহা জানি।”

তখন নাপিত আর যায় কোথায়? সে ভাবল বাদশা তাদের গোপন কথা সবই জানতে পেরেছেন। সে তাড়াতাড়ি উঠে বাদশার পায়ে পড়ে কেঁদে বলল, “বাদশা নামদার, আমার কসুর মাফ করেন। আপনার দুষ্ট উজীর অনেক টাকা পয়সা দিয়ে আমাকে আপনার গলা কাটতে পরামর্শ দিয়েছে।”

বাদশা তখন সবই বুঝতে পারলেন। উজীরকে বন্দী করে এনে শাস্তি দিলেন, আর রাখাল বালকটিকে এনে নিজের সভাসদদের অন্তর্ভূক্ত করলেন।

GolpoKotha
GolpoKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments