বাবা ছেলে ও তাদের গাধার একটি শিক্ষণীয় গল্প
এক লোক ও তার ছোট ছেলে মিলে তাদের বাড়ির পোষা গাধাটিকে বিক্রি করার জন্য হাটের পথে রওনা দিল। হাট অনেকটা দূরে, তাই দুজনেই ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল। পথে যেতে যেতে গ্রামের এক লোকের সঙ্গে দেখা হলো। লোকটি অবাক হয়ে বলল, আরে, তোমরা তো ভীষণ বোকা! এত বড় গাধা আছে অথচ দু’জনেই হেঁটে যাচ্ছ? গাধা কি শুধু বোঝা টানার জন্য, চড়ার জন্য নয়? বলে লোকটা হেসে চলে গেল। কথাটা শুনে বাবা ভেবে দেখলেন, লোকটার কথাও মিথ্যে নয়। তাই তিনি ছেলেকে গাধার পিঠে বসালেন, আর নিজে হেঁটে চলতে লাগলেন।
কিছুদূর যেতেই দেখা হলো কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে। তারা দেখে হো হো করে হেসে বলল “দেখেছিস, কি নিষ্ঠুর ছেলে! ছোট্ট বয়সেই বাবাকে হাঁটিয়ে দিয়ে দিব্যি গাধার পিঠে চড়ে বসেছে ! আজকালকার ছেলেপুলে এমনই।” তাদের ঠাট্টা-মশকরা শুনে ছেলেটি লজ্জায় গাধা থেকে নেমে পড়ল। এবার বাবা ছেলেকে হাঁটতে বললেন আর নিজেই গাধার পিঠে বসলেন।
এভাবে তারা কিছুটা এগোতেই দুই মহিলার সঙ্গে দেখা হলো। এক মহিলা আরেকজনকে ফিসফিস করে বলল “দেখো দেখি কেমন নির্লজ্জ লোক! নিজে দিব্যি গাধার পিঠে বসেছে, আর ছোট্ট ছেলেটাকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে। বাবা হয়ে ছেলের প্রতি এতটুকু মায়া নেই!” কথা শুনে লোকটার বুক ধক করে উঠল। তিনি ভাবলেন, মানুষের মুখ বন্ধ করা মুশকিল। তাই এবার ছেলেকে নিজের সামনে বসিয়ে নিলেন গাধার পিঠে। বাবা-ছেলে একসঙ্গে গাধায় চড়ে হাটের কাছাকাছি পৌঁছালেন।
কিন্তু এবারও মানুষ থামল না। চারপাশের লোকজন হাততালি দিয়ে হেসে উঠল “আহা রে, এত ছোট্ট একটা গাধার পিঠে একসঙ্গে বাবা-ছেলে বসে গেছে! প্রাণীটার দুঃখ-দুর্দশা বোঝে না! একেবারেই দয়া নেই।” এসব কথা শুনে বাবা এবার চিন্তায় পড়ে গেলেন। ছেলের সঙ্গে আলোচনা করে অবশেষে তারা নতুন বুদ্ধি বের করল। বন থেকে একটি বাঁশ কেটে এনে গাধার পা বেঁধে দুই প্রান্তে ঝুলিয়ে কাঁধে তুলে নিল দুজন মিলে। একে একে তারা হেঁটে চলতে লাগল। মানুষের ভিড় আরও জমল, সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ল “এই তো দেখো, পৃথিবীর বোকা লোকেরা! গাধাকে চড়তে না দিয়ে উল্টে গাধাকে কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে!”
শেষমেশ তারা যখন হাটের কাছাকাছি একটি সাঁকোতে পৌঁছাল, তখন হঠাৎ গাধার বাঁধন খুলে গেল। গাধাটি ছটফট করতে করতে নদীতে পড়ে গেল এবং স্রোতে ভেসে গেল। বাবা-ছেলে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তখনই পেছন থেকে আসা এক বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এসে বললেন “এই ঘটনাই তোমাদের শেখায়, জীবনে সবাইকে খুশি করতে গেলে আসলে কাউকেই খুশি করা যায় না। মানুষ যা-ই করো না কেন সমালোচনা করবে। তাই সবসময় নিজের বিবেক আর যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিখো।”
উপরের গল্পটি প্রাচীন উপকথা লোকের সমালোচনাকে যারা খুব বেশি ভয় পায় তাদের জন্য এ গল্পটি শিক্ষণীয় !
- লোকের সমালোচনাকে কখনোই খুব বেশি প্রাধান্য দিবেন না, এতে আপনার মনের স্বাধীনতা নষ্ট হবে, মানসিক প্রশান্তির বদলে অশান্তিতে ভুগবেন !
- একটা কথা মনে রাখবেন, যারা সবসময় আপনার নেতিবাচক সমালোচনা করে; তাদের মূল লক্ষ্য আপনার ভুল ধরিয়ে দেওয়া নয়, বরং আপনার সুখ দেখে তারা ঈর্ষান্বিত হয় !
- এমনও দেখা যায়, আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য !
- তাই এই ধরনের নিন্দুকের কথা এক মিনিট চিন্তা করা মানেই আপনার মূল্যবান সময় থেকে এক মিনিট অপচয় করছেন !
- তবে হ্যাঁ, একথাও সত্য যে সব সমালোচনাই খারাপ নয় !
- যখন আপনার বাবা-মা কিংবা প্রকৃত শুভাকাংখীরা আপনার সমালোচনা করবে, তখন চিন্তা করুন আপনার কোথাও হয়তো কোনো ভুল হচ্ছে !
- ভুলের উৎস অনুসন্ধান করুন এবং সে-অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন !