ঘোড়া আর মশার নীতিমূলক গল্প
একবার এক সবুজ ঘাসে ভরা মাঠে একটা বড়সড় ঘোড়া চরছিল। রোদ ঝলমলে দিন, ঘোড়াটা শান্তভাবে ঘাস খাচ্ছিল। তখনই একটা ছোট্ট মশা উড়ে এসে বসল ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়া এত বড় প্রাণী যে সে টেরই পেল না যে তার পিঠে একটা মশা বসেছে।
মশা প্রথমে বলল,এই যে, তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছনা নাকি?
ঘোড়া হেসে উত্তর দিল, আরে, দেখছি তো! তুমি তো খুব ছোট। এজন্যই চোখে পড়নি।
মশা একটু গম্ভীর ভঙ্গিতে ঘোড়াকে পর্যবেক্ষণ করল। দেখল তার লম্বা পা, শক্ত খুর, লম্বা ঘাড় আর মাথার উপরে দাঁড়ানো কান। বিশাল চেহারা দেখে মশার চোখ কপালে।
মশা প্রথমে বলল, তুমি তো খুব বড়সড় প্রাণী।
ঘোড়া মাথা দুলিয়ে শান্ত গলায় বলল, হ্যাঁ, আমি তোমারমত ছোট নই।
- তাহলে আমি তোমার চেয়ে অনেক ছোট, তাই তো?
- হ্যাঁ, তুমি বেশ ছোট।
- আর তুমি শক্তিশালীও?
- হ্যাঁ, আমি বেশ শক্তিশালী।
- তাহলে নিশ্চয়ই মাছিরা তোমার মতো শক্তিশালী নয়?
- না।
- ডাঁশও নয়?
- না।
- ঘোড়াপোকাও না?
- না।
ঘোড়ার মুখ থেকে একের পর এক উত্তর শুনে মশার বুক ফুলে উঠল। সে ভাবল, ঘোড়া অনেক বড় আর শক্তিশালী, ঠিক আছে। কিন্তু আমরাই আসল শক্তিশালী। আমাদের সংখ্যা দিয়ে আমরা ওকে হারিয়ে দিতে পারব।
মশা বুক ফুলিয়ে ঘোষণা দিল, শোনো, তুমি যতই বড় হও না কেন, আমরা মশারা তোমার চেয়ে শক্তিশালী। আমাদের ভিড় সামলাতে তুমি পারবে না।
ঘোড়া শান্তভাবে বলল, না, তোমরা জিততে পারবে না।
মশা জেদ ধরে বলল, হ্যাঁ, আমরা জিতবই।
ঘোড়া – না।
মশা – হ্যাঁ।
এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হ্যাঁ-না চলতে থাকল।
অবশেষে ঘোড়া বলল, তর্ক করে লাভ নেই। চল, কাজেই প্রমাণ হোক। দেখা যাক কে জিতে।
মশা বলল, ঠিক আছে। আমি রাজি।
মশা উড়ে গিয়ে গলা ফাটিয়ে ডেকে আনল তার ভাই-বোন আর বন্ধুদের, এসো ভাই মশারা, আমাদের যুদ্ধ শুরু। আমরা আজ ঘোড়াকে হারাব।
মশার ডাকে হাজার হাজার মশা এসে ভিড় করল। বন থেকে, নদী থেকে, ঝোপঝাড় থেকে, নালা-ডোবায় লুকিয়ে থাকা সব মশা উড়ে এল, এসে বসলো ঘোড়ার শরীরে। ঘোড়ার শরীরে একেবারে ভরে গেল। কেউ পিঠে বসল, কেউ গলায়, কেউ খুরে, কেউ লেজে। ছোট-বড় সব মশাই জায়গা পেল।
ঘোড়া এবার জিজ্ঞেস করল, সবাই কি এসেছে?
প্রথম মশা বলল, হ্যাঁ, সবাই এসেছে।
সবাই কি বসার জায়গা পেয়েছে?
ঘোড়ার চারদিকে কয়েকটা পাক মেরে এসে মশা বলল, হ্যাঁ। সবাই জায়গা পেয়েছে।
তাহলে আঁকড়ে ধরে থাকুক।
হ্যাঁ, সবাই আঁকড়ে ধরেছে।
হঠাৎ ঘোড়া বসে পড়ল পাছার উপর। তারপর গড়াগড়ি শুরু করল। এপাশ-ওপাশ শুয়ে সে গড়াতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যে তার ভারী দেহের নিচে পিষে গেল হাজার হাজার মশা। মারা পড়ল সকল মশা।
কেবল বেঁচে গেল দুইটি মশা, সেই প্রথম ঝগড়াটে মশা, সে ঘোড়ার গায়ে বসেনি, বসেছিল একটু দূরের গাছে। আরেকটি ছোট্ট মশা, যে ঘোড়ার গা থেকে কোনোমতে উড়ে এসে প্রাণ বাঁচাল, যদিও তার পাখা ভেঙে গিয়েছিল।
শিক্ষা
আমাদের সমাজেও এই ছোট্ট মশার মত অনেক গল্পবাজ আছে, যারা চারপাশে হৈচৈ ফেলে দেয়, তারা ঝগড়া বাঁধায়, অকারণে সবাইকে উত্তেজিত করে তোলে। আর ঝামেলা বাঁধলে তারাই প্রথমে সরে যায়, গিয়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয় আর বিপদে পড়ে তার পাশে থাকা মানুষেরা।
বিদেশি গল্প অবলম্বনে